( অঙ্গুত্তর নিকায় / ৮ম নিপাত / ৩. গৃহপতি বর্গ / ৯.অক্ষণ সুত্র)
২৯. হে ভিক্ষুগণ, অশিক্ষিত সাধারণ ব্যক্তি বলে থাকে, “ক্ষণকাজ1, ক্ষণকাজ”। কিন্তু সে ক্ষণ জানে না, অক্ষণও জানে না। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের আটটি অক্ষণ, অসময় আছে। কোন আটটি? হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম2 দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী3, পরিনির্বাণকারী4, সম্বোধিগামী5। কিন্তু এই ব্যক্তি নরকে উৎপন্ন হয়েছে। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে প্রথম অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। কিন্তু এই ব্যক্তি ইতর প্রাণিকুলে উৎপন্ন হয়েছে। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে দ্বিতীয় অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। কিন্তু এই ব্যক্তি প্রেতকুলে উৎপন্ন হয়েছে। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে তৃতীয় অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। কিন্তু এই ব্যক্তি দীর্ঘায়ু দেবকুলে6 উৎপন্ন হয়েছে। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে চতুর্থ অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। কিন্তু এই ব্যক্তি প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নিয়েছে। সে থাকে অজ্ঞ ও হীন ব্যক্তিদের মাঝে, যেখানে ভিক্ষুদের আনাগোনা নেই, ভিক্ষুণী, উপাসক ও উপাসিকাদের আনাগোনা নেই। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে পঞ্চম অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। এই ব্যক্তি মধ্যঅঞ্চলের জনপদগুলোতে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সে হয় মিথ্যাদৃষ্টিক, বিপরীত দর্শনকারী – “দান নেই, যজ্ঞ নেই, পূজা নেই, সুকর্ম-দুষ্কর্মের ফল নেই, ইহলোক নেই, পরলোক নেই, মাতা নেই, পিতা নেই, আবির্ভূত হওয়া সত্ত্ব নেই, জগতে এমন কোনো সম্যকগত, সম্যক আচরণকারী শ্রমণ-ব্রাহ্মণ নেই যিনি ইহলোক ও পরলোককে স্বয়ং উচ্চতর জ্ঞানে সাক্ষাৎ করে প্রকাশ করতে পারেন।” হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে ষষ্ঠ অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। এই ব্যক্তি মধ্যঅঞ্চলের জনপদগুলোতে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সে হয় প্রজ্ঞাহীন, জড়, হাবাগোবা, সুভাষিত-দুর্ভাষিত কথার অর্থ বুঝতে অক্ষম। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে সপ্তম অক্ষণ, অসময়।
আবার হে ভিক্ষুগণ, এমনো হয় যখন জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ, বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান উৎপন্ন হন না। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয় না যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। কিন্তু তখন এই ব্যক্তি মধ্যঅঞ্চলের জনপদগুলোতে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সে হয় প্রজ্ঞাবান, অজড়, হাবাগোবা নয়, সুভাষিত-দুর্ভাষিত কথার অর্থ বুঝতে সক্ষম। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে অষ্টম অক্ষণ, অসময়।
হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের একটিমাত্র ক্ষণ, সময় আছে। কোন একটি? হে ভিক্ষুগণ, এখানে জগতে তথাগত অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হন, তিনি বিদ্যা ও আচরণসম্পন্ন, লোকবিদ, শ্রেষ্ঠ দম্যব্যক্তি পরিচালনাকারী, দেবমানবের শিক্ষক, বুদ্ধ, ভগবান। সেই সুগত কর্তৃক ধর্ম দেশিত হয়েছে যা হচ্ছে উপশমকারী, পরিনির্বাণকারী, সম্বোধিগামী। এই ব্যক্তি মধ্যঅঞ্চলের জনপদগুলোতে জন্ম নিয়েছে। সে হয় প্রজ্ঞাবান, অজড়, হাবাগোবা নয়, সুভাষিত-দুর্ভাষিত কথার অর্থ বুঝতে সক্ষম। হে ভিক্ষুগণ, ব্রহ্মচর্য যাপনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে একমাত্র ক্ষণ, একমাত্র সময়।
মনুষ্যজন্ম এবং সুপ্রকাশিত সদ্ধর্ম লাভ করে
যারা এই ক্ষণকে গ্রহণ করে না, তারা সেই ক্ষণকে হারিয়ে ফেলে।
বহু অক্ষণ আছে, যেগুলো মার্গের অন্তরায়কারী।
তার মধ্যেও জগতে কদাচিৎ তথাগতগণ উৎপন্ন হন।
সেই তিনি এখন বর্তমান আছেন, যা জগতে দুর্লভ।
মনুষ্যজন্ম এবং সদ্ধর্ম দেশনাও লাভ হয়েছে।
হে সত্ত্বগণ, নিজের কাম্য বিষয়গুলোর জন্য প্রচেষ্টা থামাও।
কীভাবে সদ্ধর্মকে জানবে? তোমাদের ক্ষণ যেন চলে না যায়।
ক্ষণ হারানো সত্ত্বরা নরকে পড়ে অনুশোচনা করে।
সদ্ধর্মের এই নিশ্চয়তাকে হারালে7
বণিকের অতীত অর্থের মতো8 চিরকাল অনুতাপ করবে9।
অবিদ্যায় আবৃত মানুষ, যারা সদ্ধর্মকে আরাধনা করে না,
জন্ম-মৃত্যুর এই সংসারকে তারা চিরকাল অনুভব করবে।
যারা মনুষ্যজন্ম লাভ করে সুপ্রকাশিত সদ্ধর্মকে পেয়েছে,
শাস্তার কথা অনুসারে কাজ করেছে, করবে অথবা করছে,
জগতে ক্ষণ জেনে যারা শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মচর্য যাপন করে,
যারা তথাগত প্রকাশিত মার্গের চর্চা করেছে,
যারা সংযত, চক্ষুষ্মান, আদিত্যবন্ধু বুদ্ধ কর্তৃক দেশিত,
তারা সর্বদা গুপ্ত, সর্বদা স্মৃতিমান, কামনাহীন হয়ে অবস্থানকারী।
সকল সুপ্ত প্রবণতাকে ঝেড়ে ফেলে মারের জগত10কে তারা আর অনুসরণ করে না।
যাদের আসব ক্ষয়প্রাপ্ত, তারাই জগতে পার উত্তীর্ণ।
—অর্থকথা ও টীকার ব্যাখ্যাবলী—
- ক্ষণে কাজ করে বলে ক্ষণকাজ, অর্থাৎ সুযোগ বা সময় পেয়ে কাজ করে।
- ধর্ম মানে হচ্ছে চারিসত্যধর্ম।
- উপশমকারী মানে হচ্ছে ক্লেশের উপশম ঘটায়।
- পরিনির্বাণকারী মানে হচ্ছে ক্লেশগুলো নিভিয়ে দেয়।
- সম্বোধির দিকে গমন করে, প্রাপ্ত হয় বলে সম্বোধিগামী।
- দীর্ঘায়ু দেবকুলে কথাটি এখানে অসংজ্ঞসত্ত্ব দেবকুলকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
- সদ্ধর্মের এই নিশ্চয়তাকে হারালে মানে হচ্ছে যদি কোনো প্রমত্ত ব্যক্তি এই বর্তমান ক্ষণকে লাভ করেও সদ্ধর্মের নিশ্চয়তাকে হারায়, সময়মতো কুশলকর্ম সম্পাদন না করে।
- অতীত অর্থের মতো মানে হচ্ছে হেলায় হারানো অর্থের মতো।
- চিরকাল অনুতাপ করবে মানে হচ্ছে চিরকাল অনুশোচনা করবে। যেমন "অমুক স্থানে মালামাল এসেছে" শুনে কোনো বণিক যদি সেখানে না যায়, আর অন্য কোনো বণিক গিয়ে যদি সেই মালামাল নিয়ে নেয়, সেগুলো সে হয়তো আটগুণ, এমনকি দশগুণ দামেও বিক্রি করতে পারে। তখন প্রথম বণিক "আমার অর্থ হারিয়ে গেল" বলে অনুতাপ করতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে যে এই বর্তমান ক্ষণ লাভ করেও সদ্ধর্মপথে না চলে সদ্ধর্মের নিশ্চয়তাকে হারায়, সে এই বণিকের হারানো অতীত অর্থের মতোই অনুতাপ করবে, অনুশোচনা করবে।
- মারের জগত মানে হচ্ছে এই সংসার।