Skip to content
Menu
ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু
MENUMENU
  • Home
  • বিনয়
    • পারাজিকা
      • পারাজিকা অধ্যায়
        • চতুর্থ পারাজিকা
  • সুত্র
    • অঙ্গুত্তর নিকায়
      • ৮ম নিপাত
        • গৃহপতি বর্গ
          • অক্ষণ সুত্র
    • খুদ্দক নিকায়
      • ২. ধর্মপদ
        • ২. অপ্রমাদ বর্গ
          • ৭. মঘের কাহিনী
        • ৮. সহস্র বর্গ
          • ৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী
        • ২৩. নাগ বর্গ
          • ৮. মারের কাহিনী
      • ৫. সুত্তনিপাত
        • ২. চূলবর্গ
  • অভিধর্ম
    • ধর্মসঙ্গণি
      • ১. চিত্তের উৎপত্তি অধ্যায়
        • কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ
  • অন্যান্য
    • অনাগতবংশ বাংলা অনুবাদ
  • বিশুদ্ধিমার্গ
  • বৌদ্ধ শব্দকোষ
ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু

অনাগতবংশ বাংলা অনুবাদ

Posted on October 15, 2019November 15, 2019

|| সেই অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধকে নমস্কার ||

১. মহাপ্রজ্ঞাবান সারিপুত্র, (যিনি ছিলেন) নেতা উপতিষ্য, (যিনি ছিলেন) জ্ঞানী ধর্মসেনাপতি, (তিনি) লোকনায়ক বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হলেন।
২-৩. অনাগতবুদ্ধ সম্বন্ধে সংশয় নিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার পরবর্তী যে জ্ঞানী বুদ্ধ আসবেন তিনি কীরকম হবেন? আমি তা বিস্তারিত শুনতে চাই। হে চক্ষুমান, দয়া করে বলে দিন।” স্থবিরের কথা শুনে ভগবান বললেন,
৪. অজিতের রয়েছে মহাযশসম্পন্ন অজস্র পুণ্যরাশি। তার সবটুকু বিস্তারিতভাবে বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সেটার আংশিক বলছি, সারিপুত্র। শোন তাহলে।
৫-৬. এক কোটি বছর পরে ভবিষ্যতে এই ভদ্রকল্পে মৈত্রেয় নামে সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হবেন – যিনি দ্বিপদীদের মধ্যে উত্তম, মহাপুন্যবান, মহাপ্রজ্ঞাবান, মহাজ্ঞানী, মহাযশসম্পন্ন, মহাবলে বলীয়ান, মহাশক্তিধর, চক্ষুষ্মান।
৭. তিনি হবেন মহাগতিসম্পন্ন, স্মৃতিমান, ধীমান, বহু শাস্ত্রে সুশিক্ষিত, সকল বিষয় জ্ঞাত ও সুস্পর্শিত, সকল বিষয়ে অনুপ্রবিষ্ট ও পরীক্ষিত।
৮-৯. তখন কেতুমতি নামের রাজধানী হবে বার যোজন দীর্ঘ ও সাত যোজন বিস্তৃত, নরনারীতে পরিপূর্ণ, বহু প্রাসাদে সজ্জিত, শুদ্ধ সত্ত্বগণের বিচরিত, অজেয়, ধর্মত সুরক্ষিত।
১০-১১. তখন অনন্ত বল ও বাহনসম্পন্ন শঙ্খ নামক রাজা হবেন, যিনি সপ্তরত্নসম্পন্ন, মহাশক্তিশালী চক্রবর্তী, ঋদ্ধিমান, যশবান, সবধরনের কামে সমর্পিত, শত্রুদেরকে হটিয়ে নিরাপদে ধর্মত শাসনকারী।
১২-১৩. তার প্রাসাদ হবে দিব্যবিমানের মতো, পুণ্যকর্মের ফলে সৃষ্ট, নানা রত্নে সজ্জিত, চারিদিকে রেলিং দিয়ে ঘেরা, সুবিভক্ত, মনোরম, আলোয় ঝলমলে, সুউচ্চ, দেখলেই যেন চোখ ঝলসে যায়।
১৪. রাজা মহাপনাদের জন্য নির্মিত সেই রত্নময় প্রাসাদ উত্তোলন করে সঙ্খ রাজা বাস করবেন।
১৫-১৬. তার সেই নগরীতে থাকবে বহু পথ। যত্রতত্র থাকবে সুনির্মিত, রমণীয় ও সুন্দর ঘাটবিশিষ্ট পুকুর। পুকুরের পানি হবে স্বচ্ছ, পরিষ্কার, মিষ্টি, সুগন্ধিময়। পুকুরের তীর হবে সমতল, তীরে বসে কাক জলপান করতে পারে এমন কানায় কানায় পূর্ণ, বালিময়।
১৭-১৮. সেই পুকুরগুলো হবে পদ্ম ও শাপলায় ঢাকা, সকল ঋতুতে থাকবে অনাবিল। সাত সারি তালগাছ এবং সাত স্তরবিশিষ্ট রত্মময় দেয়াল সেই নগরীর চারপাশে ঘিরে থাকবে। কুশাবতী রাজধানীই তখন কেতুমতী হবে।
১৯. নগরীর চারদ্বারে কল্পতরু গাছ উৎপন্ন হবে। ঝলমলে সেই গাছগুলোর একটা হবে নীল, একটা হলুদ, একটা লাল ও একটা সাদা রঙের।
২০. দিব্যবস্ত্র, দিব্য প্রসাধনী, সব ধরনের উপভোগ্য ও পরিভোগ্য জিনিস সেখানে ঝুলতে থাকবে।
২১. সেখানে নগরের মাঝে চারটি দিকে মুখ করে চারটি হলঘর থাকবে। সেখানে পুণ্যকর্মের ফলে আরেকটি কল্পতরু বৃক্ষ থাকবে।
২২. সুতিবস্ত্র, রেশমীবস্ত্র, শণবস্ত্র, ও কোদুম বস্ত্রগুলো পুণ্যকর্মের ফলে উৎপন্ন হয়ে কল্পতরু গাছগুলোতে ঝুলতে থাকবে।
২৩. খঞ্জনি, মৃদঙ্গ এবং মৃদঙ্গ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো পুণ্যকর্মের ফলে উৎপন্ন হয়ে কল্পতরু গাছগুলোতে ঝুলতে থাকবে।
২৪. রত্নময় আবরণ, বাহুতে পরার চুড়ি, গলায় পরার চুড়িগুলো পুণ্যকর্মের ফলে উৎপন্ন হয়ে কল্পতরু গাছগুলোতে ঝুলতে থাকবে।
২৫. উন্নত (এক জাতীয় অলঙ্কার), প্রস্ফুটিত মুখ (এক জাতীয় অলঙ্কার), অঙ্গদা (বাহুতে পরার চুড়ি), মণিমেখলা (মহিলাদের চুড়ি জাতীয় অলঙ্কার) নামের অলঙ্কারগুলোও পুণ্যকর্মের ফলে উৎপন্ন হয়ে কল্পতরু গাছগুলোতে ঝুলতে থাকবে।
২৬. আরো অন্যান্য নানাবিধ সকল অলঙ্কার ও ভূষণ পুণ্যকর্মের ফলে উৎপন্ন হয়ে কল্পতরু গাছগুলোতে ঝুলতে থাকবে।
২৭. সত্ত্বদের পুণ্যকর্মের ফলে চাষ না করেই স্বয়ং উৎপন্ন, খুদ ও তুষহীন, শুদ্ধ, সুগন্ধিময়, পরিপক্ক চাল মানুষেরা পরিভোগ করবে।
২৮. (বর্তমানের) দুহাজার দুইশ সত্তরটি অম্বণ (গামলার মতো পাত্র) তখন ষোলটি অম্বণের সমান হবে।
২৯. পুণ্যকর্মের ফলে তখন একটা বীজ থেকে দুটো তুম্ব চাল উৎপন্ন হবে।
৩০-৩২. শঙ্খরাজার রাজধানী কেতুমতিতে যেসব লোকজন থাকবে, তারা তখন বাহুতে চুড়ি পরবে। তারা হবে মনের ইচ্ছা পূরিত, সুন্দর চেহারাসম্পন্ন। বড় কানের দুল পরবে তারা। তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হবে হলদে চন্দন মাখা। তারা কাশীর মিহি বস্ত্র পরিধানকারী হবে। তারা হবে বহু অর্থবিত্তসম্পন্ন ধনী। তারা বীণার সুরে ঘুম থেকে জাগবে। তাদের দেহমনে নিত্য সুখ বিরাজ করবে।
৩৩. জম্বুদ্বীপ তখন হবে দশহাজার যোজন, নিষ্কণ্টক, পরিচ্ছন্ন, জঙ্গলহীন, সমতল, সবুজ ঘাসে ভরা।
৩৪. তখন ইচ্ছা (তৃষ্ণা), অনশন (ভাত খাওয়ার পরবর্তী দৈহিক আলস্য) ও বার্ধক্য এই তিনটামাত্র রোগ থাকবে। পাঁচশ বছর হলে নারীরা বিবাহযোগ্য হবে।
৩৫. সবাই হবে একতাবদ্ধ, ভদ্রভাবে কথা বলবে। সেখানে কোনো বাদবিবাদ থাকবে না। সেখানে লতা, ঝোপঝাড়, ও গাছপালা সব ফলফুলে ভরা হবে।
৩৬. সেখানে ঘাসগুলো হবে চার আঙুল লম্বা, তুলোর মতো কোমল। সেখানে অত ঠাণ্ডাও হবে না, অত গরমও হবে না। বৃষ্টি হবে সমপরিমাণে। মৃদু বাতাস বইবে।
৩৭. সেখানে আবহাওয়া সবসময় সুন্দর থাকবে। হ্রদ ও নদীনালা পরিপূর্ণ থাকবে। ভূমির এখানে সেখানে তিল ও ডালের মতো সাইজের অকর্কশ, শুদ্ধ বালুকণাগুলো মুক্তোদানার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে।
৩৮-৪০. জম্বুদীপ তখন সাজানো বাগানের মতো রমণীয় হবে। গ্রামগঞ্জগুলো তখন খুব কাছাকাছি হবে, বিশাল নলবন ও বাঁশবনের মতো ঘন ও একাকার হবে, একহাত জায়গাও খালি থাকবে না এমন নিরন্তর মানুষজন হবে। সেগুলো হবে নরনারীতে পরিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, বিস্তৃত, নিরাপদ, শত্রুহীন ও উপদ্রবহীন।
৪১. নরনারী তখন হবে সবসময় হাসিখুশি, উচ্ছ্বল। তারা সবসময় সুখেই রত থাকবে। নক্ষত্র উৎসবে খুশি ও আনন্দ নিয়ে তারা বিচরণ করবে।
৪২. বহু পানীয়, বহু খাদ্য, বহু মাংস, বহু মদ (সুরোদক) থাকবে। দেবতাদের অালকমন্দা অথবা কুরুর রাজধানীর মতো বিশাল ও রমণীয় হবে তখন এই জম্বুদ্বীপ।
৪৩-৪৫. দ্বিপদীদের মধ্যে উত্তম, অনুব্যঞ্জনসম্পন্ন, বত্রিশটি উৎকৃষ্ট লক্ষণসম্পন্ন, স্বর্ণরঙা, নির্মল, দ্যুতি ছড়ানো, জ্যোতির্ময়, সর্বোচ্চ যশপ্রাপ্ত, সৌভাগ্যবান, রূপবান, সুদর্শন, মহাপ্রভাবশালী ও অসম মৈত্রেয় তখন অজিত নামে ব্রাহ্মণকুলে জন্মাবেন। মহাধনী, মহাভোগসম্পত্তিসম্পন্ন, সেরা ও সর্বোত্তম বংশ হিসেবে খ্যাত ব্রাহ্মণকুলে তিনি জন্মাবেন।
৪৬. অজিতের জন্য তখন শ্রীবর্ধ, বর্ধমান, সিদ্ধার্থ ও চন্দক এই রত্নময় প্রাসাদগুলো উৎপন্ন হবে।
৪৭-৪৮. সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ, মহা, মধ্যম ও ছোট সব ধরনের অলঙ্কারে সজ্জিত এবং সম-অলঙ্কৃত কমপক্ষে লক্ষ নারী অজিতের পরিচারিকা হিসেবে থাকবে। চন্দ্রমুখী নামের নারী হবে তার স্ত্রী, পুত্র হবে ব্রহ্মবর্ধন।
৪৯-৫১. তিনি সকল প্রকার রতিসুখে আমোদিত হয়ে নন্দনকাননের দেবরাজ ইন্দ্রের মতো সকল যশ অনুভব করে আট হাজার বছর মহাসুখে গৃহে বাস করবেন। বিনোদনের উদ্দেশ্যে উদ্যানে গেলে তখন কাম্যবিষয়গুলোতে উপদ্রব দেখে কামরতি বিনাশ করা হচ্ছে বোধিসত্ত্বদের নিয়ম।
৫২-৫৩. তিনিও (অন্যান্য বোধিসত্ত্বগণের মতো) বৃদ্ধ, রোগগ্রস্ত, মৃত ও সুখী প্রব্রজিত এই চারটি নিমিত্ত দেখে সকল সত্ত্বের প্রতি অনুকম্পাকারী হয়ে তখন কামরতির প্রতি নিরুৎসুক হয়ে মহাসুখে পরম শান্তির পথকে খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়বেন।
৫৪. পুরুষোত্তম সেই বীর এক সপ্তাহ প্রচেষ্টা করবেন। প্রাসাদ সহ উড়ে গিয়ে তিনি গৃহত্যাগ করবেন।
৫৫. বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও চতুরঙ্গিনী সেনা, চারি পরিষদ ও চুরাশি হাজার রাজকন্যা দ্বারা পরিবৃত হয়ে মহাজনতা সহকারে অজিত প্রব্রজিত হবেন।
৫৭. মৈত্রেয় প্রব্রজিত হলে চুরাশি হাজার বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণও প্রব্রজিত হবেন।
৫৮. ঋষিদত্ত ও পুরাণ এই দুই ভাইও তখন চুরাশি হাজার জন নিয়ে প্রব্রজিত হবেন।
৫৯. সেই চুরাশিহাজার থেকে জাতিমিত্র ও বিজয় এই অমিতবুদ্ধি সম্পন্ন দুই যুগল সম্বুদ্ধের কাছে আসবেন।
৬০. সেই চুরাশিহাজার থেকে শুদ্ধিক নামক গৃহপতি এবং সুধনা নামক উপাসিকা সম্বুদ্ধের কাছে আসবেন।
৬১. সেই চুরাশিহাজার থেকে শঙ্খ নামের উপাসক, শঙ্খা নামক উপাসিকা সম্বুদ্ধের কাছে আসবেন।
৬২. সেই চুরাশিহাজার থেকে সুধন নামক গৃহপতি, যিনি সুদত্ত নামে বিখ্যাত, তিনিও সম্বুদ্ধের কাছে আসবেন।
৬৩-৬৫. যশবতী নামক নারী, যিনি বিশাখা নামে বিখ্যাত তিনি চুরাশি হাজার নরনারী পরিবৃত হয়ে মৈত্রেয় বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজিত হবেন। নগর ও জনপদ থেকেও তখন বিভিন্ন গোত্রের বিভিন্ন জনপদের অন্যান্য বহু ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও শুদ্র গৃহত্যাগ করে মৈত্রেয় বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজিত হবেন।
৬৬. যেদিন তিনি গৃহত্যাগ করবেন সেদিনই তিনি বোধিমণ্ডপে এসে উপস্থিত হবেন।
৬৭. অপরাজিত উত্তম বোধিপালঙ্কে পদ্মাসনে বসে তিনি বোধিলাভ করবেন।
৬৮. এরপর সেরা পুষ্পিত নগবন উদ্যানে গিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ ধর্মচক্র প্রবর্তন করবেন।
৬৯. সেখানে তিনি দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখের অতিক্রম এবং দুঃখের উপশমের দিকে পরিচালনাকারী আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গকে দেশনা করবেন।
৭০. লোকনাথ বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তনের সময়ে চারদিকে শতযোজন পর্যন্ত মানুষজন উপস্থিত থাকবে।
৭১. এর চেয়েও বহু বেশি দেবতা তার কাছে আসবে। বুদ্ধ তখন হাজার কোটি দেবতাকে বন্ধন থেকে মুক্ত করবেন।
৭২-৭৪. তখন শঙ্খরাজা তার রত্নময় প্রাসাদ বুদ্ধসহ সঙ্ঘের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করে এরপরে গরীব দীনদুঃখীদেরকে আরো মহাদান দেবেন। এরপর তিনি মহারাজার ভাব নিয়ে অনন্ত সৈন্যসামন্তসহ তাড়াতাড়ি রাণিকে নিয়ে নব্বই হাজার কোটি লোকজন সহকারে বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হবেন।
৭৫. তখন সম্বুদ্ধ সেরা ধর্মের ঢোল বাজাবেন, অমৃতঢোলের গর্জনে চারিসত্যকে প্রকাশিত করবেন।
৭৬. রাজার অনুচর হিসেবে থাকা নব্বই হাজার কোটি জনতা সবাই “এসো ভিক্ষুগণ” বলার সাথে সাথে ভিক্ষু হয়ে যাবে।
৭৭. তখন দেবতা ও মানুষেরা বুদ্ধের কাছে এসে অর্হত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে।
৭৮. বুদ্ধ তাদেরকে সেগুলো ব্যাখ্যা করে দেবেন। তখন আশিহাজার কোটি অর্হত্ব প্রাপ্ত হবে। সেটি হবে তৃতীয় মহাসমাবেশ।
৭৯. আসবহীন, বিমল শান্তচিত্ত লক্ষ কোটি অর্হত নিয়ে হবে প্রথম সমাবেশ।
৮০. বর্ষাবাস শেষে ভগবান নব্বইহাজার কোটি অর্হতের সমাবেশে প্রবারণা করবেন।
৮১-৮২. যখন তিনি হিমালয়ের গন্ধমাদন পর্বতের স্বর্ণরৌপ্যময় ঢালে নির্জনবাসে যাবেন, সেখানে তিনি আশি হাজার কোটি শান্তচিত্ত আসবহীন বিমল অর্হৎদের সাথে ধ্যানক্রীড়া করবেন।
৮৩. লক্ষকোটি ষড়াভিজ্ঞ মহাঋদ্ধিমান ভিক্ষু লোকনাথ মৈত্রেয় বুদ্ধকে ঘিরে থাকবে সর্বদা।
৮৪-৮৭. প্রতিসম্ভিদায় দক্ষ, ব্যাকরণে পণ্ডিত, বহুশাস্ত্রে সুশিক্ষিত, ধর্মধর, যোগ্য ও সঙ্ঘকে শোভনকারী শান্তদান্ত জ্ঞানীগণ সেই বুদ্ধকে ঘিরে থাকবেন। সেই ত্রাণপ্রাপ্ত ও শান্ত ভিক্ষুনাগদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে দ্বিপদীদের মধ্যে উত্তম, অনুকম্পাকারী, কারুণিক মহামুনি মৈত্রেয় তার শ্রাবকসঙ্ঘের সাথে প্রবারণা করে তখন বহু সত্ত্বকে উদ্ধার করতে করতে দেবলোকসহ গ্রামেগঞ্জে, রাজধানীতে বিচরণ করবেন।
৮৮-৯০. ধর্মের ঢোল বাজিয়ে, ধর্মের শঙ্খ বাজিয়ে, ধর্মযজ্ঞের কীর্তন শুনিয়ে শুনিয়ে, ধর্মের পতাকা উত্তোলন করে, সিংহগর্জন করতে করতে, শ্রেষ্ঠ ধর্মচক্র প্রবর্তন করে, নরনারীদেরকে উত্তম সত্যরস পান করিয়ে, ধনী-গরীব সকল সত্ত্ব ও মহাজনতার হিতের জন্য বুঝানোর যোগ্যদেরকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে তিনি বিচরণ করবেন।
৯১-৯৩. চক্ষুষ্মান বুদ্ধ কাউকে ত্রিশরণে প্রতিষ্ঠিত করবেন, কাউকে পঞ্চশীলে, কাউকে দশবিধ কুশলে, কাউকে চারিমার্গফলে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কাউকে প্রতিসম্ভিদা, কাউকে অষ্টসমাপত্তি, কাউকে ত্রিবিদ্যা, কাউকে ছয় অভিজ্ঞা প্রদান করবেন।
৯৪. এভাবে বুদ্ধ জনগণকে উপদেশ দেবেন, তখন মৈত্রেয় বুদ্ধের শাসন বিস্তৃত হবে।
৯৫. বোঝানোর মতো কাউকে দেখলে তিনি লক্ষযোজন মুহুর্তের মধ্যে গিয়ে তাকে বুঝাবেন।
৯৬. তখন মৈত্রেয় বুদ্ধের মায়ের নাম হবে ব্রহ্মবতী, পিতার নাম হবে সুব্রহ্মা। পিতা তখন শঙ্খরাজার পুরোহিত হিসেবে থাকবেন।
৯৭. অগ্রশ্রাবক বা প্রধান দুই শিষ্য হবেন অশোক এবং ব্রহ্মদেব। সিংহ নামক সেবক তাকে সেবা করবেন।
৯৮. পদ্মা ও সুমনা হবেন দুই প্রধান শিষ্যা। সুমন ও শঙ্খ দুজন হবেন গৃহীদের মধ্যে প্রধান দায়ক।
৯৯. যশবতী ও শঙ্খা দুজন হবেন গৃহীদের প্রধান দায়িকা। সেই ভগবানের বোধিবৃক্ষ হবে নাগকেশর বৃক্ষ।
১০০. এর কাণ্ড হবে দুই হাজার হাত, ডালপালা থাকবে দুহাজার। পাতার কোঁকড়ানো ডগাগুলো বিস্তৃত ময়ুরের লেজের মতো শোভা পাবে।
১০১. শাখার অগ্রভাগগুলো সবসময় থাকবে ফুলে ফুলে ভরা, দেবসুগন্ধি ছড়াবে সবসময়। ফুটে থাকা ফুলগুলো হবে চাকার মতো, ফুলের রেণু দিয়ে নালী পূর্ণ করা যাবে।
১০২. অনুকুল ও প্রতিকুল বাতাসে তার সুগন্ধি দশ যোজন পর্যন্ত ছড়াবে। সেই ফুলগুলো বোধিমণ্ডপের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে।
১০৩. জনপদবাসী সেখানে গিয়ে এমন সুন্দর গন্ধ পেয়ে সেই গন্ধে আমোদিত হয়ে প্রশংসাবাক্য বলতে থাকবে।
১০৪. বুদ্ধের সেই পুণ্যগুলোর কীরকম সুখদায়ক ফল। যার তেজে ফুলের গন্ধ পর্যন্ত অচিন্তনীয়ভাবে ছড়ায়।
১০৫. সেই বুদ্ধ উচ্চতায় আশিহাত লম্বা হবেন। বুক হবে পঁচিশ হাত চওড়া।
১০৬-১০৭. তার চোখ হবে বিশাল, ঘন হবে চোখের লোমগুলো। তিনি হবেন বিশুদ্ধ চক্ষুসম্পন্ন, নির্নিমেষ নয়নে দিনরাত সুক্ষ্ম স্থুল সবকিছু মাংসচোখেই চারদিকে বার যোজন পর্যন্ত দেখতে পাবেন। তার দেহের প্রভা সবসময় পঁচিশ হাত পর্যন্ত ছড়াবে।
১০৮. তিনি বজ্রদণ্ড অথবা প্রদীপবৃক্ষের মতো শোভিত হবেন। অমূল্য রত্নের মতো, সূর্যের মতো দীপ্তিমান হবেন।
১০৯. তার মহাপুরুষ লক্ষণ ও অনুব্যঞ্জন লক্ষণগুলোর রশ্মি দেখা যাবে সকল সময়ে। লক্ষ লক্ষ বিবিধ ধরনের রশ্মি বের হবে।
১১০. তার প্রতি পদে পদে পদ্মফুল ফুটবে। ত্রিশ হাত সমান হবে সেই ফুলের পাঁপড়িগুলো, পাঁপড়িগুলোর মধ্যকার দূরত্ব হবে পঁচিশ হাত।
১১১. সেই পদ্ম লাল রেণুতে ভর্তি থাকবে। তার কেশর হবে বিশ হাত দীর্ঘ, কর্ণিকা হবে ষোল হাত।
১১২. কামাবচর দেবতারা পূজাস্তম্ভ নির্মাণ করবে। নাগরাজা ও সুপর্ণরা সেগুলোকে সাজাবে।
১১৩. সেখানে হবে আটটি স্বর্ণস্তম্ভ, আটটি রৌপ্যময়, আটটি মণিময় স্তম্ভ, আটটি প্রবালস্তম্ভ।
১১৪. অনেক রত্ন সঞ্চিত, অনেক পতাকা ও মালা দিয়ে সজ্জিত সেই স্তম্ভগুলোতে বহু শত পতাকা উড়তে থাকবে।
১১৫. সেখানে মণিমুক্তার মালা দিয়ে অলঙ্কৃত চাঁদের মতো শামিয়ানা থাকবে। তার চারদিকে টুংটাং শব্দে বাজতে থাকা বহু ছোট ছোট ঘন্টা থাকবে, মাথায় পরিধানের জন্য বহু রত্নময় অলঙ্কার থাকবে।
১১৬. সুরভিময় নানান ফুল, বিবিধ দিব্য ও মনুষ্য সুগন্ধিচূর্ণ সেখানে সুগন্ধি ছড়াবে।
১১৭. রংবেরঙের পঞ্চবর্ণা সুন্দর মনোরম নানা বস্ত্র বুদ্ধের চারপাশে যেন খেলা করবে।
১১৮-১২১. সেখানে এক হাজার হাত উচ্চ দর্শনীয়, মনোরম, রত্নশোভিত তোরণস্তম্ভ থাকবে বাধাহীন ও সুগঠিত হয়ে। সেগুলো যেন বিশাল ও সকল দিক আলোকিত করছে বলে দেখা যাবে। তাদের মাঝে ভিক্ষুসঙ্ঘের সামনে থাকা বুদ্ধ যেন পরিষদের মধ্যে থাকা ব্রহ্মা, অথবা দেববিমানের মধ্যে থাকা ইন্দ্রের মতো। বুদ্ধ হাঁটলে তারাও হাঁটে, বুদ্ধ দাঁড়ালে তারাও দাঁড়ায়। বসা ও শোয়ার সময়েও বুদ্ধের সাথে সাথে তার পরিষদও সবসময় তাকে অনুসরণ করে।
১২২-১২৪. মৈত্রেয়ের অনন্তপুণ্যতেজে তাকে পূজাকারী অারো অন্যান্য দেবতা ও মানুষের পূজাগুলোতে বিবিধ অলৌকিক ঘটনা সবসময় দেখা যাবে। সেই অলৌকিক ঘটনাগুলো দেখে নানান জাত, নানান জনতা স্ত্রীপুত্র সহ আজীবন বুদ্ধের শরণ নেবে। যারা বুদ্ধের কথা শুনে ব্রহ্মচর্যে প্রবেশ করবে তারা মরণতাড়িত সুদুস্তর সংসার সাগর পার হয়ে যাবে।
১২৫. বহু গৃহী তখন দশ প্রকার পুণ্যকর্ম ও তিন প্রকারে সুচরিত কর্ম করে ধর্মচোখকে বিশুদ্ধ করবে। সাদরে ত্রিপিটক শিক্ষা করে সুন্দরভাবে ধর্মচারী হয়ে বহুজন স্বর্গগামী হবে।
১২৭. এত যশসম্পত্তির সবটুকু এভাবে বলা সম্ভব নয়। সেই সময়কালে তারা নিত্য সুখী হবে।
১২৮. মহাযশ ও সুখ এবং আয়ু, চেহারা ও বলের দিক দিয়ে সেই মানুষেরা দিব্যসম্পত্তি উপভোগ করবে।
১২৯. যতকাল ইচ্ছা কামসুখ উপভোগ করে পরে তারা সুখেই আয়ুর শেষ সীমায় উপনীত হবে।
১৩০. তখন বুদ্ধের আশি হাজার বছর আয়ু হবে। ততকাল পর্যন্ত বেঁচে থেকে তিনি বহুজনকে ত্রাণ করবেন।
১৩১-১৩৩. তিনি মানসিকভাবে পরিপক্ক সকল সত্ত্বগণকে বোঝাবেন। বাকিদেরকে সত্যগুলো এবং মার্গ-অমার্গ সম্পর্কে উপদেশ দেবেন। এরপর ভবিষ্যত জনতার জন্য ধর্মের মশাল, ধর্মের নৌকা, ধর্মের আয়না ও ধর্মের ওষুধ সুন্দরভাবে স্থাপিত করে দিয়ে যাবেন। এরপর কাজ সমাপ্তকারী শিষ্যমণ্ডলীসহ অগ্নিকুণ্ডলীর মতো জ্বলে সেই বুদ্ধ পরিনির্বাপিত হবেন।
১৩৪. সম্বুদ্ধের পরিনির্বাণের পরে তার শাসন এক লক্ষ চুরাশি হাজার বছর পর্যন্ত থাকবে। এরপরে জগত থেকে সেটা লুপ্ত হয়ে যাবে।
১৩৫. এমনই অনিত্য সংস্কারগুলো, অধ্রুব, ক্ষণিকের মাত্র। ভঙ্গুর, জর্জর, রিক্ত এই জগত। সেগুলো এমনকি ঋদ্ধিমানের বশে পর্যন্ত চলে না।
১৩৬. শূন্য মুঠোর মতোই সংস্কারগুলো হচ্ছে শূন্য, মুর্খদের প্রলাপের মতো। সেগুলো কারোর বশে থাকে না। এমনকি ঋদ্ধিমানের বশেও নয়।
১৩৭. এভাবে যথাযথভাবে জেনে সকল সংস্কারের প্রতি বিরাগী হওয়া উচিত। দুর্লভ সেই পুরুষোত্তম, তিনি সর্বত্র জন্মান না। যেখানে জন্মান সেই কুলে সুখই আসে।
১৩৮. তাই মৈত্রেয় বুদ্ধের দর্শনের জন্য ইহকালে মনে উৎসাহ নিয়ে দৃঢ় পরাক্রমে সুষ্ঠুভাবে কাজ করুন।
১৩৯-১৪০. যেকোনো ভিক্ষু ভিক্ষুণী উপাসক বা উপাসিকা যদি কল্যাণময় কাজ করেন, অপ্রমত্ত হয়ে অবস্থান করেন, মহান বুদ্ধকে সম্মান করেন, পরম পূজা করেন, তিনি সেসময়ে দেবগণসহ মহান বুদ্ধের সম্মেলনকে দেখতে পাবেন।
১৪১. কাজেই ব্রহ্মচর্য আচরণ করুন। যথাযোগ্য দান দিন। উপোসথ পালন করুন। সুন্দরভাবে মৈত্রী ভাবনা করুন।
১৪২. সবসময় অপ্রমত্ত হয়ে পুণ্যকাজে রত থাকুন। ইহকালে এভাবে কর্ম করে দুঃখের অন্ত সাধন করতে পারবেন।

———অনাগতবংশ সমাপ্ত——–||

### অনাগতবংশ পালিটা পড়তে পারেন এখানে।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সাইটে সার্চ করুন

ত্রিপিটক ও অন্যান্য

        • চতুর্থ পারাজিকা
    • পাচিত্তিয়
          • ১. ইন্দক সুত্র
            • ১০. বিপুলপর্বত সুত্র
            • ১. প্রথম কোটিগ্রাম সুত্র
            • ৪. কূটাগার সুত্র
          • অক্ষণ সুত্র
          • ৪. দীর্ঘজাণু সুত্র
          • ৭. মঘের কাহিনী
          • ৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী
          • ৮. মারের কাহিনী
          • ২. আমগন্ধ সুত্র
        • কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ
    • অনাগতবংশ বাংলা অনুবাদ

নতুন শব্দগুলো

  • সিরীস August 23, 2020
  • মল্লিকা August 22, 2020
  • সিন্দুৰার August 22, 2020
  • কুমুদ August 22, 2020
  • কুন্দ August 22, 2020

নতুন পোস্টগুলো

  • Declension of Pāli Nouns, Pronouns and Adjectives February 22, 2020
  • Conjugation of Pāli Verbs February 22, 2020
  • পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস – ২. গ্রন্থকার পরিচিতি February 2, 2020
  • পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস – ১. ত্রিপিটক পরিচিতি February 1, 2020
  • বিপুলপর্বত সুত্র January 25, 2020

সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো

  • অর্পন বড়ুয়া on ২. আমগন্ধ সুত্র
  • অর্পন বড়ুয়া on ৭. মঘের কাহিনী
  • ছদক চাকমা on বিপুলপর্বত সুত্র
  • Bodhiratna Bhikkhu on চতুর্থ পারাজিকা
  • Bodhiratna Bhikkhu on কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ

পোস্টের তালিকা

  • ►2020 (8)
    • ►February (4)
    • ►January (4)
  • ►2019 (9)
    • ►December (1)
    • ►November (1)
    • ►October (7)

ট্যাগ

আয়ুকল্প (1) ইন্দ্রকূট (1) কক্করপত্র (1) কোলিয় (1) গৃহীজীবন (1) গড় আয়ু (1) দীর্ঘজাণু (1) বুদ্ধান্তর কল্প (1) ব্যগ্ঘপজ্জ (1) ভ্রুণের ক্রমবিকাশ (1) মাতৃগর্ভ (1) যক্ষ (1) রাজগৃহ (2)
©2021 ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু | Powered by WordPress and Superb Themes!