( অন্যান্য / বংশ গ্রন্থাবলী / চূলগ্রন্থবংশ / ১. ত্রিপিটক পরিচিতি )
[[ চূলগ্রন্থবংশ হচ্ছে পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস। এটি ১৭শ শতকে বার্মার নন্দপঞ্ঞা নামক ভিক্ষু কর্তৃক রচিত। এতে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বার্মায় রচিত হাজার বছরের পালি গ্রন্থাবলীর তালিকা রয়েছে। এটি পালি সাহিত্যের একটি অমূল্য দলিল এবং পালি গবেষকদের কাছে খুব সমাদৃত।]]
শ্রেষ্ঠ অগ্র বংশশ্রেষ্ঠ সম্বুদ্ধকে নমস্কার করে,
বুদ্ধজাত ধর্মকে এবং নিষ্কলুষ সঙ্ঘকেও নমষ্কার করে,
জঙ্ঘদাস কর্তৃক রচিত গ্রন্থবংশকে ভিত্তি করে,
ত্রিপিটকের সমাহারে পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস বলব।
হে সাধুগণ, সাধুগণের সংশয় দূরকারী
আমার সেই কথা শুনুন।
সমগ্র বুদ্ধবাণী হচ্ছে বিমুক্তিদায়ী হিসেবে এক প্রকার।
পিটকের হিসেবে তা হয় তিন প্রকার।
নিকায় হিসেবে তা হয় সব মিলিয়ে পাঁচ প্রকার।
অঙ্গ হিসেবে হয় নয় প্রকার।
ধর্মস্কন্ধ গণনার ভিত্তিতে হয়
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ।
পিটকের হিসেবে কীভাবে তিন প্রকার হয়?
বিনয়পিটক, অভিধর্মপিটক ও সুত্রপিটক। এর মধ্যে বিনয়পিটক কোনটি? পারাজিকা অধ্যায়, পাচিত্তিয় অধ্যায়, মহাবর্গ অধ্যায়, চূলবর্গ অধ্যায় এবং পরিবার অধ্যায়। এই অধ্যায়গুলো হচ্ছে বিনয়পিটক।
কোনটি অভিধর্মপিটক? ধর্মসঙ্গণী, বিভঙ্গ, ধাতুকথা, পুগ্গল-পঞ্ঞত্তি, কথাবত্থু, যমক ও পট্ঠান। এই সাতটি গ্রন্থ হচ্ছে অভিধর্ম পিটক।
কোনটি সুত্রপিটক? শীলস্কন্ধবর্গ থেকে শুরু করে অবশিষ্ট বুদ্ধবাণী হচ্ছে সুত্রপিটক।
নিকায় হিসেবে কীভাবে পাঁচ প্রকার হয়?
নিকায় হচ্ছে পাঁচ প্রকার। দীর্ঘনিকায়, মধ্যমনিকায়, সংযুক্ত নিকায়, অঙ্গুত্তর নিকায়, খুদ্দকনিকায়।
এর মধ্যে দীর্ঘনিকায় কোনটি? শীলস্কন্ধবর্গ, মহাবর্গ ও পাথিকবর্গ, এই তিনটি বর্গ হচ্ছে দীর্ঘনিকায়। এই তিনটি বর্গে রয়েছে চৌত্রিশটি বর্গ। [শীলস্কন্ধবর্গ থেকে শুরু করে যে চৌত্রিশটি সুত্র রয়েছে সেগুলো মিলে দীর্ঘনিকায় নাম হয়েছে। ]
মধ্যম নিকায় কোনটি? মূলপণ্ণাস, মধ্যমপণ্ণাস ও উপরিপণ্ণাস, এই তিনটি পণ্ণাস মিলে হচ্ছে মধ্যমনিকায়। এই তিনটি পণ্ণাসের মধ্যে ১৫২টি সুত্র রয়েছে। [মূলপণ্ণাস থেকে শুরু করে যে ১৫২টি সুত্র রয়েছে সেগুলো মিলে মধ্যমনিকায় নাম হয়েছে।]
সংযুক্ত নিকায় কোনটি? সগাথাবর্গ, নিদানবর্গ, স্কন্ধবর্গ, ষড়ায়তন বর্গ, মহাবর্গ এই পাঁচটি বর্গ হচ্ছে সংযুক্ত নিকায়। এই পাঁচটি বর্গে ৭৭৬২টি সুত্র রয়েছে। [সগাথাবর্গ থেকে শুরু করে যে ৭৭৬২টি সুত্র রয়েছে বিজ্ঞগণ সেগুলোকে সংযুক্তনিকায় বলে জানবেন।]
অঙ্গুত্তর নিকায় কোনটি? একনিপাত, দুই নিপাত, তিন নিপাত, চারনিপাত, পাঁচ নিপাত, ছয় নিপাত, সাত নিপাত, আট নিপাত, নয় নিপাত, দশ নিপাত, একাদশ নিপাত – এই এগারটি নিপাত হচ্ছে অঙ্গুত্তর নিকায়। এই এগারটি নিপাতে ৯৫৫৭টি সুত্র রয়েছে। [একনিপাত থেকে শুরু করে যে ৯৫৫৭টি সুত্র রয়েছে সেগুলো হচ্ছে অঙ্গুত্তর নিকায়।]
খুদ্দক নিকায় কোনটি? খুদ্দকপাঠ, ধর্মপদ, উদান, ইতিবুত্তক, সুত্তনিপাত, বিমানবত্থু, পেতবত্থু, থেরকথা, থেরীকথা, জাতক, মহানির্দেশ, পটিসম্ভিদামার্গ, অপদান, বুদ্ধবংশ, চরিয়াপিটক, বিনয়পিটক ও অভিধর্মপিটক। এই সতেরটি গ্রন্থে বহু হাজার সুত্র রয়েছে। [মহর্ষিগণ কর্তৃক বহু হাজার সুত্র এই পঞ্চম নিকায়ে বলে নির্ধারিত হয়েছে। এটি এভাবে খুদ্দক বলে পরিচিত।]
কীভাবে অঙ্গ হিসেবে নয় প্রকার হয়?
সুত্র, গেয়্য, বেয়্যাকরণ, গাথা, উদান, ইতিবুত্তক, জাতক, অদ্ভূতধর্ম, প্রশ্নোত্তর হিসেবে নয় প্রকার হয়। এর মধ্যে উভয় বিভঙ্গ, নির্দেশ, খন্ধক, পরিবার, সুত্তনিপাতের মঙ্গলসুত্র, রতনসুত্র, তুবট্টক সুত্র এবং অন্যান্য সুত্র নামে পরিচিত তথাগতবাণীগুলোও সুত্র বলে বুঝতে হবে।
সকল গাথাযুক্ত সুত্রকে গেয়্য বলে বুঝতে হবে। বিশেষ করে সমগ্র সগাথাবর্গ।
সমগ্র অভিধর্মপিটক এবং গাথাবিহীন সুত্র ও অন্য আটটি অঙ্গের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন বুদ্ধবাণীকে বেয়্যাকরণ বলে বুঝতে হবে।
ধর্মপদ, থেরকথা, থেরীকথা, সুত্তনিপাতে সুত্র নামে যে কেবল গাথাগুলো রয়েছে সেগুলোকে গাথা বলে বুঝতে হবে।
খুশিতে জ্ঞানময় গাথা পদাবলী সংযুক্ত বিরাশিটি সুত্রকে উদান বলে বুঝতে হবে।
ভগবান কর্তৃক এরূপ বলা হয়েছে … এভাবে শুরু হওয়া ১১০টি সুত্রকে ইতিবুত্তক বলে বুঝতে হবে।
অপণ্ণক জাতক থেকে শুরু করে ৫৫০টি জাতককে জাতক বলে বুঝতে হবে।
হে ভিক্ষুগণ, আনন্দের এই চারটি আশ্চর্যজনক ও অদ্ভূত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এভাবে শুরু হওয়া সকল আশ্চর্যজনক ও অদ্ভূত বৈশিষ্ট্যযুক্ত সুত্রগুলো অদ্ভূতধর্ম বলে বুঝতে হবে।
চুলবেদল্ল, মহাবেদল্ল, সম্যকদৃষ্টি, সক্কপ্রশ্ন, সঙ্খারভাজনিয, মহাপুণ্ণম সুত্র ইত্যাদি সমস্ত বেদ ও তুষ্টিতে জিজ্ঞাসিত সুত্রগুলোকে বেদল্ল বলে বুঝতে হবে।
কোনগুলো চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ তা দেখানো কঠিন। আর সেগুলো বিস্তারিত বলতে গেলেও অনেক লম্বাচওড়া হয়ে যাবে। তাই শুধু সেগুলো নির্ধারণের পদ্ধতি বলব। এক একটি কাহিনী হচ্ছে এক একটি ধর্মস্কন্ধ। এক একটি উৎপত্তির কাহিনী একটি ধর্মস্কন্ধ। এক একটি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হচ্ছে একটি ধর্মস্কন্ধ। এক একটি প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এক একটি ধর্মস্কন্ধ।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কার দ্বারা ভাষিত হয়েছে? কোথায় ভাষিত হয়েছে? কখন ভাষিত হয়েছে? কাকে উপলক্ষ করে ভাষিত হয়েছে? কোন উদ্দেশ্যে ভাষিত হয়েছে? কারা ধরে রেখেছে? কীভাবে এসেছে? কীকারণে শিক্ষা করা উচিত?সেগুলোর উত্তর হচ্ছে এরকম-
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কার দ্বারা ভাষিত হয়েছে? – বুদ্ধ ও অনুবুদ্ধগণের দ্বারা ভাষিত হয়েছে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কোথায় ভাষিত হয়েছে? – দেবতা ও মানুষের মাঝে ভাষিত হয়েছে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কখন ভাষিত হয়েছে? – বুদ্ধের জীবিত থাকাকালীন সময়ে এবং তারপরেও ভাষিত হয়েছে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কাকে উপলক্ষ করে ভাষিত হয়েছে? – পঞ্চবর্গীয়দের মতো অনুশাসনযোগ্য বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ভাষিত হয়েছে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কোন উদ্দেশ্যে ভাষিত হয়েছে? – বর্জনীয় বিষয় এবং অবর্জনীয় বিষয় জেনে বর্জনীয় বিষয় পরিত্যাগ করে অবর্জনীয় বিষয় আচরণ করে আনির্বাণকাল পর্যন্ত ইহকাল ও পরকালে সুখ পাওয়ার জন্যে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধকে কারা ধরে রেখেছেন? – অনুবুদ্ধগণ এবং শিষ্য ও অনুশিষ্যরা ধরে রেখেছেন।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কীভাবে এসেছে? – আচার্য পরম্পরা চলে এসেছে।
চুরাশি হাজার ধর্মস্কন্ধ কীকারণে শিক্ষা করা উচিত? – বর্জনীয় বিষয় এবং অবর্জনীয় বিষয় জেনে বর্জনীয় বিষয় পরিত্যাগ করে অবর্জনীয় বিষয় আচরণ করে আনির্বাণকাল পর্যন্ত ইহকাল ও পরকালে সুখ পাওয়ার জন্যে। এভাবে তা আনির্বাণকাল পর্যন্ত ইহকাল ও পরকালে সুখের কারণ হয়। তাই সেকারণে তা যত্নের সাথে শিক্ষা করা উচিত, ধারণ করা উচিত, আবৃত্তি করা উচিত, পুনরাবৃত্তি করা উচিত।
সাধু সাধু সাধু ভান্তে, অনেক কিছু জানলাম