Skip to content
Menu
ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু
MENUMENU
  • Home
  • বিনয়
    • পারাজিকা
      • পারাজিকা অধ্যায়
        • চতুর্থ পারাজিকা
  • সুত্র
    • অঙ্গুত্তর নিকায়
      • ৮ম নিপাত
        • গৃহপতি বর্গ
          • অক্ষণ সুত্র
    • খুদ্দক নিকায়
      • ২. ধর্মপদ
        • ২. অপ্রমাদ বর্গ
          • ৭. মঘের কাহিনী
        • ৮. সহস্র বর্গ
          • ৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী
        • ২৩. নাগ বর্গ
          • ৮. মারের কাহিনী
      • ৫. সুত্তনিপাত
        • ২. চূলবর্গ
  • অভিধর্ম
    • ধর্মসঙ্গণি
      • ১. চিত্তের উৎপত্তি অধ্যায়
        • কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ
  • অন্যান্য
    • অনাগতবংশ বাংলা অনুবাদ
  • বিশুদ্ধিমার্গ
  • বৌদ্ধ শব্দকোষ
ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু

৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী

Posted on October 22, 2019November 15, 2019
( ২. সুত্র পিটক / ৫. খুদ্দক নিকায় / ২. ধর্মপদ / ৮. সহস্র বর্গ / ৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী)
১১০. যদি কেউ দুঃশীল ও চঞ্চলমনা হয়ে হাজার বছর বাঁচে,
1 তার চেয়ে শীলবান ধ্যানীর এক দিন বেঁচে থাকাও শ্রেয়।

 


—অর্থকথা ও টীকার ব্যাখ্যাবলী—

 

  1. “যদি কেউ দুঃশীল ও চঞ্চলমনা হয়ে হাজার বছর বাঁচে” এই ধর্মদেশনাটি শাস্তা (শ্রাবস্তীর) জেতবনে অবস্থানকালে সংকিচ্চ শ্রামণকে উপলক্ষ করে বলেছিলেন।

    শ্রাবস্তীতে নাকি ত্রিশজন যুবক শাস্তার ধর্মকথা শুনে বুদ্ধশাসনে বুক পেতে দিয়ে (অর্থাৎ খুব উৎসাহ নিয়ে) প্রব্রজিত হল। তারা উপসম্পদা নিয়ে পাঁচ বর্ষা হওয়ার পরে শাস্তার কাছে গিয়ে শুনল যে গ্রন্থধুর ও বিদর্শনধুর নামে দুটো ধুর বা পথ আছে। তারা ভাবল, “আমরা বুড়ো বয়সে প্রব্রজিত হয়েছি।” তাই তারা গ্রন্থধুরের প্রতি উৎসাহিত না হয়ে বিদর্শন ধুর পূরণ করতে উৎসাহী হল এবং শাস্তার কাছ থেকে একদম অর্হত্ব লাভ হওয়া পর্যন্ত ধ্যানের বিষয়ে জেনে নিয়ে বলল, “ভান্তে, আমরা একটা অরণ্যে যাব।”

    শাস্তা তখন জিজ্ঞেস করলেন, “কোন জায়গায় যাবে?” তারা অমুক জায়গায় যাবে শুনে তিনি দেখলেন যে সেখানে এক উচ্ছিষ্টভোজীর কারণে তাদের বিপদ হবে। কিন্তু সংকিচ্চ শ্রামণ গেলে সেই বিপদ কেটে যাবে। আর তাদের প্রব্রজ্যার কাজও পরিপূর্ণভাবে সফল হবে।

    সংকিচ্চ শ্রামণের পরিচিতি

    সংকিচ্চ শ্রামণ ছিল সারিপুত্র থেরোর সাতবছর বয়স্ক এক শ্রামণ। তার মা নাকি ছিল শ্রাবস্তীর এক ধনী ঘরের কন্যা। সংকিচ্চ শ্রামণ গর্ভে থাকা অবস্থায় সেই কন্যা কী এক রোগে তৎক্ষণাৎ মারা গিয়েছিল। তার মৃতদেহ দাহ করার সময়ে পেটের মাংসপিণ্ড বাদে সবকিছু পুড়ে গেল। তখন সেই পেটের মাংসপিণ্ডটাকে চিতা থেকে নামিয়ে দুই তিনটি স্থানে বর্শা দিয়ে গুঁতানো হলো। বর্শার ডগা (পেটের মাংসপিণ্ডের মধ্যে ঢুকে গিয়ে) বাচ্চাটির চোখের কোণে লাগল। এভাবে পেটের মাংসপিণ্ডটিকে গুঁতিয়ে সেখানে অঙ্গার ঢুকিয়ে দিয়ে, অঙ্গার দিয়ে একদম ঢেকে দিয়ে লোকজন চলে গেল। পেটের মাংসপিণ্ড পুড়ে গেল। বাচ্চাটি কিন্তু রয়ে গেল অঙ্গাররাশির উপরে, যেন কোনো পদ্মফুলের মাঝে শুয়ে থাকা সোনার প্রতিমা। শেষ জন্মধারী ব্যক্তির উপরে সিনেরু পর্বত এসে আছড়ে পড়লেও অর্হৎ না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যু হয় না।

    পরদিন চিতার আগুন নেভানোর জন্য লোকজন এসে বাচ্চাটাকে সেভাবে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে ভাবল, এত কাঠ পুড়ে গেল, সারা শরীর পুড়ে গেল, কিন্তু বাচ্চাটি কীভাবে পুড়ল না? এই ঘটনার মানে কী? তারা বাচ্চাটাকে গ্রামের মধ্যে নিয়ে গিয়ে এক জ্যোতিষীর কাছে নিয়ে গেল। জ্যোতিষী বলে দিল, যদি বাচ্চাটি গৃহী হয়ে সংসারে বসবাস করে তাহলে সাত পুরুষ পর্যন্ত আত্মীয়স্বজন সবাই দরিদ্র হয়ে যাবে। আর যদি প্রব্রজিত হয়, তাহলে পাঁচশ শ্রমণ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বিচরণ করবে। সঙ্কু বা বর্শা দ্বারা তার চোখের কোণা কেটে যাওয়ার কারণে তাকে সংকিচ্চ নাম দেয়া হলো। সে পরবর্তীতে সংকিচ্চ হিসেবেই পরিচিত হল। তার আত্মীয়স্বজন বলল, যা হোক, বড় হলে তাকে আমাদের আর্য সারিপুত্রের কাছে প্রব্রজিত করাব। এই ভেবে তারা তাকে লালন পালন করল। সাত বছর বয়সে সে শুনল, “তোমার মায়ের গর্ভে থাকাকালে তোমার মা মারা গেছে। তার মৃতদেহ পুড়ে গেলেও তুমি পুড়ে যাও নি।” তা শুনে সে ভাবল, “আমি নাকি এমন বিপদ থেকে মুক্ত। তাহলে আর সংসারে থেকে লাভ কী? প্রব্রজিত হব।” এই ভেবে সে আত্মীয়স্বজনকে তার মনের কথা জানাল। তারাও “সাধু, বাবা” বলে তাকে সারিপুত্র থেরোর কাছে নিয়ে বলল, “ভান্তে, একে প্রব্রজিত করুন।” থেরো তাকে ভাবনার বিষয় হিসেবে ত্বকপঞ্চক বলে দিয়ে প্রব্রজ্যা দিলেন। ক্ষুরের ডগা তার মাথায় স্পর্শ করা মাত্র সে প্রতিসম্ভিদা সহকারে অর্হত্ব লাভ করল। এই হচ্ছে সংকিচ্চ শ্রামণ।

    শাস্তা দেখলেন যে সেই ত্রিশজন ভিক্ষু যে বিপদে পড়বে, সংকিচ্চ শ্রামণ গেলে সেই বিপদ কেটে যাবে। আর তাদের প্রব্রজ্যার কাজও পরিপূর্ণভাবে সফল হবে। তখন তিনি সেই দেখা করতে আসা ভিক্ষুদেরকে বললেন, “ভিক্ষুগণ, তোমরা তোমাদের বড়ভাই সারিপুত্র থেরোর সাথে দেখা করে যেও।” তারা “সাধু” বলে সায় দিয়ে থেরোর কাছে গেল। থেরো জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যাপার কী, বন্ধুগণ?”
    তারা বলল, “আমরা শাস্তার কাছে ভাবনার বিষয় গ্রহণ করে অরণ্যে প্রবেশ করতে উৎসুক হয়ে শাস্তাকে জানিয়েছিলাম। তখন শাস্তা আমাদেরকে বলেছেন, ‘তোমাদের বড়ভাই সারিপুত্র থেরোর সাথে দেখা করে যেও।’ তাই আমরা এখানে এসেছি।”

    থেরো ভাবলেন, শাস্তা নিশ্চয়ই কোনো একটা কারণ দেখে এদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। ব্যাপারটা কী? তিনি ব্যাপারটাতে মনোযোগ দিয়ে কারণটা জেনে বললেন, “তোমাদের কোনো শ্রামণ আছে, বন্ধুগণ?”
    “না, বন্ধু।”
    “না থাকলে এই সংকিচ্চ শ্রামণকে নিয়ে যাও।”
    “লাগবে না, বন্ধু। শ্রামণকে নিলে আমাদের শুধু শুধু বাধা হবে। শ্রামণ সাথে নিয়ে অরণ্যে থেকে কী হবে?”
    “বন্ধু, এ তোমাদের জন্য বাধা হবে না। বরং তোমরাই এর বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শাস্তা তোমাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন এই শ্রামণেরকে তোমাদের সাথে পাঠানোর উদ্দেশ্যে। একে সাথে করে নিয়ে যাও।”

    তারা “সাধু” বলে মেনে নিয়ে শ্রামণ সহ একত্রিশ জন হলো। তারা থেরোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিহার থেকে বেরিয়ে দূরের পথে যাত্রা শুরু করল। সেই দীর্ঘযাত্রায় দুই হাজার যোজন পথ অতিক্রম করে তারা একটি গ্রামে পৌঁছল, যেখানে এক হাজার পরিবার বসবাস করত।

    গ্রামের লোকজন তাদেরকে দেখে খুশি হলো। তারা তাদেরকে খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে জানতে চাইল, “ভান্তে, কোথায় যাবেন?”
    “কোনো একটা উপযুক্ত স্থানে, বন্ধুগণ।”
    তা শুনে তারা থেরোগণের পায়ে পড়ে প্রার্থনা করল, “ভান্তে, আপনারা এই জায়গাকে ভিত্তি করে বর্ষাবাস যাপন করলে আমরা পঞ্চশীল গ্রহণ করে উপোসথকর্ম করব।”

    থেরোগণ তা মেনে নিলেন। তখন লোকজন তাদের জন্য রাতে থাকার স্থান, দিনে থাকার স্থান, চংক্রমণ বা পায়চারির স্থান ও কুটিরের ব্যবস্থা করে দিল। তারা “আজকে আমার পালা”, “কালকে আমাদের পালা” এভাবে খুব উৎসাহ নিয়ে ভিক্ষুদেরকে সেবা করতে লাগল। থেরোগণ বর্ষা শুরুর দিনে শলাপরামর্শ করে ঠিক করল, “বন্ধুগণ, আমরা জীবন্ত বুদ্ধের কাছে ভাবনার বিষয় গ্রহণ করেছি। সেই ভাবনা চর্চা ছাড়া বুদ্ধকে খুশি করার মতো অন্য কোনোকিছু নেই। আমাদের দুর্গতির দরজা এখনো খোলা। তাই সকালে পিণ্ডচারণের সময় এবং বিকালে (বয়োজ্যেষ্ঠ) থেরোকে সেবা করার সময় বাদে বাকি সময়ে দুজন এক জায়গায় মিলিত হব না। যার কোনো অসুবিধা হবে সে ঘন্টা বাজালে তার কাছে গিয়ে ওষুধ পথ্যের ব্যবস্থা করব। সেটা বাদে রাত বা দিনের সময়টাতে মনোযোগী হয়ে ভাবনার বিষয়ে নিযুক্ত থাকব।”

    এভাবে থেরোগণ সবাই সেই নির্ধারিত নিয়মে বসবাস করছিলেন। এসময় এক জায়গায় এক দরিদ্র লোক তার কন্যাকে আশ্রয় করে থাকত। কিন্তু সেই স্থানে দুর্ভিক্ষ হওয়াতে সে তার আরেক কন্যার কাছে গিয়ে থাকার জন্য রাস্তা ধরে যাচ্ছিল। থেরোগণও গ্রামে গিয়ে পিণ্ডচারণ করে নিজ নিজ আবাসে ফেরার পথে একটা নদীতে স্নান করে বালুচরে বসে খাওয়াদাওয়া সেরে নিলেন। সেই সময়ে সেই লোকটি সেই স্থানে এসে পৌঁছে (তাদেরকে দেখে) দাঁড়াল। থেরোগণ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাচ্ছ?” সে তাদেরকে ব্যাপারটা জানাল। থেরোগণ তার প্রতি করুণা করে বললেন, “উপাসক, খুব ক্ষুধা লেগেছে তোমার। আচ্ছা, যাও। পাতা নিয়ে এসো। তোমাকে আমরা প্রত্যেকে একটা করে ভাতের পিণ্ড দেব।”

    লোকটা পাতা নিয়ে আসলে যেভাবে তারা খেতেন সেই নিয়মে ঝোল ও তরকারি ভাতের সাথে মিশিয়ে প্রত্যেকে একটা করে পিণ্ড বানিয়ে তাকে দিলেন। ভিক্ষুদের এই একটা ব্রত বা নিয়ম আছে যে, ভিক্ষুর খাওয়ার সময়ে কেউ আসলে তাকে ভাত দেয়ার সময় অগ্রভাত বা নতুন ভাত-তরকারি না দিয়ে নিজের খাওয়ার জন্য ভাত বা তরকারি নিয়ে সেখান থেকে অল্প বা বেশি দিতে হয়। তাই তারা সেভাবে দিয়েছিল। সে খাওয়া শেষে থেরোগণকে বন্দনা করে জিজ্ঞেস করল, “ভান্তে, আপনারা কি কারো কাছ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছেন?”
    “নিমন্ত্রণ নয়, উপাসক। লোকজন প্রতিদিন এরকমই খাবার দিয়ে থাকে।”

    সে চিন্তা করল, “আমরা সবসময় কত কষ্ট করে কাজ করেও এমন খাবার পাই না। অন্য কোথাও যাওয়ার কী দরকার? এদের কাছেই বসবাস করব।” তখন সে তাদেরকে বলল, “আমি আপনাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দিয়ে আপনাদের কাছে বসবাস করতে চাই।”
    “সাধু, উপাসক।”
    সে তাদের সাথে করে তাদের বাসস্থানে গিয়ে সুন্দর করে তাদের কাজগুলো করে দিয়ে ভিক্ষুদের খুব সন্তুষ্ট করল। দুই মাস পরে তার খুব কন্যাকে দেখার ইচ্ছা হলো। সে ভাবল, ভান্তেদেরকে বলতে গেলে তারা হয়তো আমাকে আর ছাড়বে না। তার চেয়ে বরং না বলে চলে যাব। এই ভেবে কাউকে কিছু না বলে চলে গেল। তার নাকি এই একটা মাত্র দোষ হয়েছিল যে, সে ভিক্ষুদেরকে কোনো কিছু না বলে চলে গিয়েছিল।

    তার যাওয়ার পথে একটা বন ছিল। সেখানে পাঁচশত ডাকাত একটা মানস করেছিল, যে এই বনে প্রবেশ করবে তাকে মেরে তার রক্তমাংস দিয়ে দেবতাকে বলি দেবে। এভাবে দেবতার কাছে প্রার্থনার সেদিন ছিল সপ্তম দিন। সেদিন ডাকাতের সর্দার গাছে উঠে লোকটাকে আসতে দেখে অন্য ডাকাতদেরকে সংকেত দিল। তারা যখন দেখল যে সে বনের মধ্যে প্রবেশ করেছে, তখন তারা তাকে ঘিরে ধরে শক্ত করে বেঁধে রাখল। কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়ে, কাঠ জড়ো করে, বড় অগ্নিকুণ্ড বানিয়ে বর্শা ছাঁচতে লাগল। সে তাদের কাজকারবার দেখে জিজ্ঞেস করল, “প্রভু, এই জায়গাতে কোনো শুয়োর নেই, হরিণ ইত্যাদিও নেই। তাহলে আপনারা এগুলো কেন করছেন?”
    “তোকে মেরে তোর রক্তমাংস দিয়ে দেবতাকে বলি দেব।”

    সে তা শুনে মরণভয়ে ভীত হয়ে ভিক্ষুদের দ্বারা কৃত উপকারের চিন্তা না করে কেবল নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য বলল, “প্রভু, আমি উচ্ছিষ্টভোজী। উচ্ছিষ্ট ভাত খেয়ে বড় হয়েছি। উচ্ছিষ্টভোজী হচ্ছে অলক্ষী। ভিক্ষুগণ যেখান সেখান থেকে গৃহত্যাগ করে প্রব্রজিত হলেও কিন্তু ক্ষত্রিয়। অমুক স্থানে একত্রিশ জন ভিক্ষু থাকেন। তাদেরকে মেরে বলি কর্ম করুন। দেবতা আপনাদের উপর খুব খুশি হবেন।”

    তা শুনে ডাকাতেরা ভাবল, এ তো ঠিকই বলেছে। এর মতো অলক্ষীকে নিয়ে কী হবে? বরং ক্ষত্রিয় মেরে বলি দেব। এই ভেবে তাকে বলল, “এসো, তাদের বাসস্থান দেখিয়ে দাও।” তাকে পথপ্রদর্শক বানিয়ে সেই স্থানে গিয়ে হাজির হয়ে দেখল বিহারে কোনো ভিক্ষু নেই। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, “ভিক্ষুরা কোথায়?” সে যেহেতু আগে দুই মাস সেখানে বসবাস করেছে, তাই সে জানত ভিক্ষুদের নিয়মগুলো। সে বলল, “তারা নিজ নিজ দিন ও রাতের স্থানগুলোতে বসে আছেন। এই ঘণ্টা বাজাও। তারা ঘণ্টার শব্দে একত্রিত হবেন।” ডাকাতের সর্দার তখন ঘণ্টা বাজাল।

    ভিক্ষুগণ ঘণ্টার শব্দ শুনে ভাবলেন, অসময়ে ঘণ্টা বাজছে। কারোর বিপদ হয়েছে মনে হয়। তারা এসে বিহারের মাঝে বসার জন্য সারি সারি করে বসানো পাথরের ফলকে বসে পড়লেন। সঙ্ঘনায়ক থেরো ডাকাতদেরকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “উপাসকেরা, এই ঘণ্টা কে বাজিয়েছে?”
    ডাকাতের সর্দার বলল, “আমি, ভান্তে।”
    “কী কারণে?”
    “আমাদের বনদেবতার কাছে একটা প্রার্থনা আছে। তার উদ্দেশ্যে বলি দেয়ার জন্য আমরা একজন ভিক্ষুকে নিয়ে যাব।”
    তা শুনে মহাথেরো তখন ভিক্ষুদেরকে বললেন, “বন্ধুগণ, ভাইদের কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা বড়ভাইকে সমাধা করতে হয়। আমি তোমাদের জন্য নিজের জীবন পরিত্যাগ করে এদের সাথে যাব। সবার কোনো অন্তরায় না হোক। তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রমণধর্ম করতে থাক।”

    তা শুনে দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ থেরো বললেন, “ভান্তে, বড়ভাইয়ের কোনো সমস্যা হলে ছোটভাইকে তার ভার নিতে হয়। তাই সেখানে বরং আমিই যাব। আপনারা মনোযোগ দিয়ে শ্রমণধর্ম করুন।” এভাবে ত্রিশজনের প্রত্যেকে “আমি যাব, আমি যাব” বলে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারা কিন্তু এক মায়ের সন্তান নন, এক পিতার সন্তান নন, অর্হৎও নন, কেবল বাকি সবাইকে বাঁচাতে নিজ নিজ জীবন পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেখানে কেউই “তাহলে তুমিই যাও” কথাটি পর্যন্ত বলতে পারেন নি।

    সংকিচ্চ শ্রামণ তাদের কথা শুনে বলল, “ভান্তে, আপনারা থামুন। আমি আপনাদের জন্য নিজের জীবন পরিত্যাগ করে সেখানে যাব।”
    তারা বললেন, “বন্ধু, আমরা সবাই মরলেও তোমাকে একা ছেড়ে দেব না।”
    “কী কারণে, ভান্তে?”
    “বন্ধু, তুমি হলে গিয়ে ধর্মসেনাপতি সারিপুত্র থেরোর শ্রামণ। তোমাকে ছেড়ে দিলে তখন সারিপুত্র থেরো বলবেন, ‘এরা আমার শ্রামণকে নিয়ে গিয়ে ডাকাতের হাতে দিয়েছে।’ সেই নিন্দাকে আমরা কখনোই ঝেড়ে ফেলতে পারব না। তাই তোমাকে আমরা ছাড়তে পারব না। “
    “ভান্তে, সম্যকসম্বুদ্ধ যে আপনাদেরকে আমার উপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন, আমার উপাধ্যায় যে আমাকে আপনাদের সাথে পাঠিয়েছেন, সেটা এই কারণ দেখেই পাঠিয়েছেন। আপনারা থাকুন। আমিই যাব।”

    সে ত্রিশজন ভিক্ষুকে বন্দনা করে “ভান্তে, আমার কোনো দোষ থাকলে ক্ষমা করুন” এই বলে চলে গেল। তখন ভিক্ষুদের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। চোখ ভরে গেল অশ্রুতে। হৃদপিণ্ড যেন বিদীর্ণ হলো। মহাথেরো ডাকাতদেরকে বললেন, “উপাসকেরা, এ তো এখনো ছোট। তোমাদেরকে আগুন জ্বালাতে দেখলে, বর্শা ছাঁচতে দেখলে, পাতা বিছাতে দেখলে সে ভয় পাবে। তাকে এক পাশে রেখে সেই কাজগুলো করো।” ডাকাতেরা শ্রামণকে নিয়ে গিয়ে একপাশে রেখে সেই কাজগুলো করল।

    কাজ শেষে ডাকাতের সর্দার তলোয়ার বের করে শ্রামণের নিকটে এল। শ্রামণটি ধ্যানে নিবিষ্ট হয়ে বসেছিল। ডাকাত সর্দার তলোয়ার ঘুরিয়ে এনে শ্রামণের কাঁধে কোপ দিল। তলোয়ারটি বাঁকা হয়ে এক প্রান্ত আরেক প্রান্তকে আঘাত করল। ভালোমতো কোপ লাগে নি মনে করে সর্দার তলোয়ারটাকে সোজা করে আবার কোপ দিল। এবার তলোয়ারটা তালপাতার মতো হয়ে হাতল পর্যন্ত জড়িয়ে গেল। শ্রামণকে সেই সময়ে সিনেরু পর্বত দিয়ে প্রহার করলেও মেরে ফেলা সম্ভব হত না, তলোয়ার দিয়ে তো দূরের কথা। সেই অদ্ভূত ঘটনা দেখে ডাকাত সর্দার ভাবল, আমার তলোয়ার আগে পাথরের স্তম্ভ অথবা খয়ের গাছের গোড়াকে কচি আগার মতো কেটে ফেলত। এখন একবার বেঁকে গেল। আরেকবার তালপাতার আবরণের মতো জড়িয়ে গেল। এই তলোয়ার অচেতন হয়েও এর গুণ জানে, আর আমি সচেতন হয়েও জানি না। তার মনে এই প্রশ্ন জাগল, “ভান্তে, আমরা ধন লাভের জন্য বনে প্রবেশ করেছি। আমাদেরকে দূর থেকে দেখলেই হাজারো লোকজন ভয়ে কেঁপে ওঠে। দুই তিনটা কথা পর্যন্ত বলতে পারে না। আপনার কিন্তু ভয়ের লেশমাত্র নেই। আপনার মুখ যেন চুলোর মধ্যে রাখা সোনার মতো, সুপুষ্পিত সোনালু ফুলের মতো ঝলমল করছে। তার কারণ কী?”

    তাই সে তলোয়ার মাটিতে ফেলে দিয়ে তার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে এই গাথার মাধ্যমে জিজ্ঞেস করল,
    তোমার নেই কোনো ভয়, চেহারা যেন আরো ঝলমলে,
    এমন মহাবিপদেও কেন কান্নাকাটি করছ না? (থেরগাথা.৭০৬)

    শ্রামণটি ধ্যানমগ্ন অবস্থা থেকে বের হয়ে এসে বলল, “হে সর্দার বন্ধু, অর্হতের দেহটা তার কাছে মাথায় রাখা বোঝার মতো হয়। সেই দেহটা ভগ্ন হলে, অথবা নষ্ট হলে সে বরং খুশিই হয়। ভয় পায় না। ”
    এই বলে সে এই গাথাগুলো বলল,
    “প্রত্যাশাহীনের কাছে কোনো মানসিক দুঃখ থাকে না।
    তার সকল ভয় অতীত হয়েছে, সকল বন্ধন ভগ্ন হয়েছে।
    ভবচক্র ধ্বংস হয়েছে, যথাযথভাবে ধর্মকে দেখার ফলে,
    মরণে তার ভয় হয় না। সেটা হয় বোঝা নামিয়ে রাখার মতো।” (থেরগাথা. ৭০৭-৭০৮)

    সংকিচ্চ শ্রামণ কর্তৃক পাঁচশত ডাকাতকে প্রব্রজ্যা প্রদান

    এই কথা শুনে সর্দার তখন পাঁচশ ডাকাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা কী করবে?”
    “আপনি কী করবেন, প্রভু?”
    “এমন অদ্ভূত ঘটনা দেখে আর সংসারে থাকার কোনো মানে হয় না। আমি ভান্তের কাছে প্রব্রজিত হব।”
    “তাহলে আমরাও সেরকম করব।”
    সে “সাধু, বাপুরা।” বলে সায় দিল।

    তখন পাঁচশত ডাকাত শ্রামণকে বন্দনা করে প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করল। সে ধারালো তলোয়ার দিয়ে চুল এবং কাপড়ের পাড় কেটে দিল। এরপর কাপড়গুলোকে তামাটে মাটি দিয়ে রং দিয়ে সেই গেরুয়া বস্ত্রে তাদেরকে পরিধান করিয়ে দিল। এরপর তাদেরকে দশশীল দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় চিন্তা করল, যদি থেরোগণের সাথে দেখা না করেই চলে যাই, তাহলে তারা শ্রমণধর্ম করতে পারবেন না। ডাকাতেরা আমাকে নিয়ে চলে আসার পরে তাদের একজনও আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। সবসময় তাদের চিন্তা হত, শ্রামণ কি মারা গেল? নাকি মারা যায় নি? এমন চিন্তার কারণে তাদের মন সেই ধ্যানের বিষয়ের প্রতি আর পরিচালিত হয় নি। তাই তাদেরকে দেখে তবেই আমরা চলে যাব।

    সে পাঁচশত ভিক্ষু সহকারে সেখানে গেল। তাকে দেখে থেরোগণ আশ্বস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হে সৎপুরুষ সংকিচ্চ, তুমি বেঁচে আছ?”
    “হ্যাঁ ভান্তে। এরা আমাকে মেরে ফেলতে চাইলেও মেরে ফেলতে পারে নি। বরং আমার গুণে শ্রদ্ধান্বিত হয়ে ধর্ম শুনে প্রব্রজিত হয়েছে। আমি আপনাদের দেখে তবেই যাব ভেবে এসেছি। আপনারা মনোযোগী হয়ে শ্রমণধর্ম করুন। আমি শাস্তার কাছে যাব।”

    সে সেই ভিক্ষুদেরকে বন্দনা করে তার অনুগামী পাঁচশ ভিক্ষুকে সাথে নিয়ে তার উপাধ্যায় সারিপুত্র থেরোর কাছে পৌঁছল। থেরো বললেন, “কী সংকিচ্চ, শিষ্য পেয়েছ নাকি?”
    “হ্যাঁ ভান্তে” বলে সে বিস্তারিত খুলে বলল।
    থেরো তখন বললেন, “যাও সংকিচ্চ। শাস্তার সাথে দেখা করো গিয়ে।”

    শাস্তাও তাদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কী সংকিচ্চ, শিষ্য পেয়েছ নাকি?”
    “হ্যাঁ ভান্তে” বলে সে শাস্তার কাছে বিস্তারিত খুলে বলল।
    শাস্তা ভিক্ষুদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তাই নাকি, ভিক্ষুগণ?”
    “হ্যাঁ, ভান্তে।”
    তখন শাস্তা বললেন, “ভিক্ষুগণ, তোমাদের চুরি-ডাকাতির মতো কর্ম করে দুঃশীল হয়ে শত বছর বেঁচে থাকার চেয়ে এখন শীলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একদিন বেঁচে থাকাও শ্রেয়।”

    এই বলে বিষয়গুলো সংক্ষেপিত করে ধর্মদেশনাকালে এই গাথা বললেন,
    "১১০. যদি কেউ দুঃশীল ও চঞ্চলমনা হয়ে হাজার বছর বাঁচে,
    তার চেয়ে শীলবান ধ্যানীর এক দিন বেঁচে থাকাও শ্রেয়।"

    এখানে দুঃশীল মানে হচ্ছে শীলহীন। শীলবান ধ্যানীর এক দিন বেঁচে থাকাও শ্রেয় মানে হচ্ছে দুঃশীলের শতবছর বেঁচে থাকার চেয়ে দুটো ধ্যানে নিরত ধ্যানী শীলবানের একদিন, এমনকি এক মুহুর্ত জীবনও শ্রেয়, উত্তম।

    দেশনা শেষে সেই পাঁচশত ভিক্ষু প্রতিসম্ভিদা সহকারে অর্হত্ব লাভ করল। সমবেত লোকজনের জন্যও ধর্মদেশনাটা সার্থক হয়েছিল।

    অধিমুক্ত শ্রামণের কথা

    সংকিচ্চ পরবর্তীতে উপসম্পদা লাভ করে দশ বছর হয়ে (অর্থাৎ স্থবির হয়ে) শ্রামণ গ্রহণ করেছিল। সেই শ্রামণটি ছিল তারই ভাগ্নে অধিমুক্ত শ্রামণ। সে প্রাপ্তবয়স্ক হলে সংকিচ্চ থেরো তাকে ভিক্ষু বানাতে চাইলেন। তাই তাকে ডেকে বললেন, “তোমাকে ভিক্ষু বানাব। যাও আত্মীয়স্বজনের কাছে গিয়ে তোমার বয়স জিজ্ঞেস করে এসো।” সে মাতাপিতার কাছে যাওয়ার সময় মাঝপথে পাঁচশ ডাকাতের হাতে ধরা পড়ল। তারা তাকে বলি দেয়ার জন্য মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিলেও সে তাদেরকে ধর্মদেশনা দিয়ে খুশি করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল এক শর্তে, “এই স্থানে আমরা আছি বলে কাউকে বলতে পারবে না।”

    সে ছাড়া পেয়ে রওনা দিতেই ওদিক থেকে তার মাতাপিতাকে সেই পথ ধরে আসতে দেখল। কিন্তু কথা দিয়েছে বলে সে আর তাদেরকে ডাকাতদের কথা বলল না। ডাকাতেরা তাদেরকে ধরে মারতে থাকলে তখন তার মাতাপিতা বিলাপ করতে থাকল, “তুমিও তো ডাকাতদের সাথে যোগ দিয়েছ মনে হচ্ছে। আমাদেরকে কিছুই বললে না।” ডাকাতেরা তাদের কথা শুনে বুঝতে পারল যে সে তার পিতামাতাকে পর্যন্ত ডাকাতদের ব্যাপারে কোনোকিছু বলে নি। তা জেনে তার খুব শ্রদ্ধান্বিত হয়ে তার কাছে প্রব্রজ্যা নিতে চাইল। সেও সংকিচ্চ শ্রামণের মতো সবাইকে প্রব্রজিত করে উপাধ্যায়ের কাছে এনে এরপরে বুদ্ধের কাছে নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনাটা জানিয়েছিল। শাস্তা জিজ্ঞেস করলেন, “তাই নাকি ভিক্ষুগণ?”
    “হ্যাঁ ভান্তে।”

    তখন শাস্তা আগের মতো করে বিষয়গুলো সংক্ষেপিত করে ধর্মদেশনাকালে এই গাথা বললেন,
    "১১০. যদি কেউ দুঃশীল ও চঞ্চলমনা হয়ে হাজার বছর বাঁচে,
    তার চেয়ে শীলবান ধ্যানীর এক দিন বেঁচে থাকাও শ্রেয়।"

    এই অধিমুক্ত শ্রামণের কাহিনীও উপরের কাহিনীর মতো।

3 thoughts on “৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী”

  1. Arun Bikash Chakma says:
    October 24, 2019 at 6:37 pm

    সাধু সাধু সাধু ভান্তে। আপনার পরিশ্রম সার্থক হোক।

    Reply
  2. Sumit Barua says:
    December 28, 2019 at 1:07 am

    নিম্নের পোস্টটি “Sreemat Prajna Bongsha Bhiksu” কর্তৃক প্রকাশিত। যিনি একসময় বহু ধর্মগ্রন্থের লেখক এবং প্রকাশক ছিলেন।ত্রিপিটকের কিছু কিছু অংশ বঙ্গানুবাদও করেছেন। বর্তমানে উনি প্রাশ্চাত্যে অবস্থান করছেন। বর্তমানে উনার দেশনানুসারে ত্রিপিটক হলো ব্রাহ্মাণবাদী ভিক্ষুদের দ্বারা রচিত অতিরঞ্জিত একটা পিঠক। বুদ্ধ কখনো জন্মান্তরবাদের কথা বলেননি? নিম্নে তার একটা উদাহরণ দেয়া হলো। এবার ভান্তে আপনিই বলেন কার কথা বিশ্বাস করব?

    চারি আর্য সত্য ও নির্বাণ কেন কাল্পনিক নয়!
    ***************************************

    মানুষ কাল্পনিকতার আশ্রয় নেয় এক সুখের দিনে; আর এক দুঃখের দিনে।
    গভীর সুখ-দুখে উতকৃষ্ট গল্প- কবিতা, আর ধর্ম-দর্শনের জন্ম হয়।
    অপরদিকে বাস্তব ধর্ম-দর্শন, ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্ম হয় নিরপেক্ষ বিচার – গবেষণায়। তার নাম মধ্য-পন্থা।

    নির্বাণ নামক পরমানন্দময় বোধ শক্তির চরম বিকাশটি রাজ- সন্যাসী সিদ্ধার্থের জীবনে ঘটে ছিল এই মধ্য- পন্থায় গবেষণার মাধ্যমে।
    তাই নির্বাণ হলো, আসক্তি- বিরক্তি মুক্ত, একান্ত নিরপেক্ষ, সজাগ সচেতন উপেক্ষা যুক্ত, সক্রিয় পরম শান্তিময় এক মানসিক অবস্থা।

    এ কারণেই বুদ্ধের দর্শন আর শিক্ষা-উপদেশ সমূহের সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোন বিরোধ নেই।

    বুদ্ধের গবেষণার বিষয় চারি আর্যসত্য হচ্ছে, এই মুহুর্তে মনের সুখানুভূতি বা দুখানুভূতি কে নিয়েই গবেষণাময় জ্ঞান অর্জনের বিষয়। তাই প্রকৃত বুদ্ধ ধর্মে কাল্পনিকতার আশ্রয় একান্ত অবান্তর বিষয়।

    বুদ্ধের জীবনবাদী শিক্খা- উপদেশ হচ্ছে, মানুষের বর্তমান চরিত্র ও মন- মানসিকতার এক পরমানন্দময় পরিবর্তন সাধনের জন্যেই। মরণের পরে কি হবে, না হবে এ নিয়ে মাথা ঝোল করার জন্যে নহে।

    বুদ্ধ প্রদর্শিত আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের ” সম্মাদিট্ঠি” সম্পন্ন ব্যক্তির বোধ উপলব্ধি এমনই হতে হবে। অন্যথায় বুদ্ধ বিরোধী আলোচনা গবেষণা আর ধারণা বিশ্বাসের চর্চাই চলবে বুদ্ধর নামে।

    Reply
    1. admin says:
      December 29, 2019 at 7:10 am

      কেউ যখন ত্রিপিটক আসল নাকি নকল তা নিয়ে সন্দেহ করে, তখন তার প্রতি আমার সন্দেহ হয়, সে কি আসলে সত্যিকারের বৌদ্ধ? নাকি নকল বৌদ্ধ? হাজার বছর ধরে কত কষ্ট করে প্রাচীন ভান্তেরা ত্রিপিটককে সযত্নে রক্ষা করে আসছেন। ষষ্ঠ সঙ্গীতিতে ত্রিপিটকধর মিনগুন সেয়াদ, মহাসি সেয়াদসহ থেরবাদী দেশগুলো থেকে কয়েক হাজার ভিক্ষু মিলে ত্রিপিটক, অর্থকথা ও টীকা একসাথে আবৃত্তি করেছেন। সেই ভান্তেরাই হচ্ছেন ভিক্ষুসঙ্ঘ। তারাই হচ্ছেন ত্রিরত্নের অন্য একটি রত্ন। ষষ্ঠ সঙ্গায়নের যে ত্রিপিটক আমরা পেয়েছি সেটা তাদেরই অবদানে। সেই ত্রিপিটককে অবিশ্বাস করা মানে হচ্ছে ভিক্ষুসঙ্ঘকে অবিশ্বাস করা, সন্দেহ করা। তারা যেটাকে ত্রিপিটক বলে জাহির করে বেড়াচ্ছে সেটা যে বুদ্ধবাণী সেটা কতটুকু সত্য? নাকি আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে? এরকম হাজারো সন্দেহ তখন মনে এসে বাসা বাঁধে। তার কারণ কী? তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার অভাব, আস্থার অভাব। আমরা তাদেরকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না। তাদের কাজের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছি না। সঙ্ঘের প্রতি যদি আমাদের বিশ্বাস না আসে, তাহলে তারা যে বুদ্ধের কথা বলে, ধর্মের কথা বলে, সেই বুদ্ধ আর ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আসবে কীভাবে? আমাদের শ্রদ্ধা খুব দুর্বলহয়ে গেছে। তাই আমাদের মনে সবসময় সন্দেহ। আমি আশা করব লোকজন এসব সন্দেহ থেকে দূরে থাকতে পারবে।

      Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সাইটে সার্চ করুন

ত্রিপিটক ও অন্যান্য

        • চতুর্থ পারাজিকা
    • পাচিত্তিয়
          • ১. ইন্দক সুত্র
            • ১০. বিপুলপর্বত সুত্র
            • ১. প্রথম কোটিগ্রাম সুত্র
            • ৪. কূটাগার সুত্র
          • অক্ষণ সুত্র
          • ৪. দীর্ঘজাণু সুত্র
          • ৭. মঘের কাহিনী
          • ৯. সংকিচ্চ শ্রামণের কাহিনী
          • ৮. মারের কাহিনী
          • ২. আমগন্ধ সুত্র
        • কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ
    • অনাগতবংশ বাংলা অনুবাদ

নতুন শব্দগুলো

  • সিরীস August 23, 2020
  • মল্লিকা August 22, 2020
  • সিন্দুৰার August 22, 2020
  • কুমুদ August 22, 2020
  • কুন্দ August 22, 2020

নতুন পোস্টগুলো

  • Declension of Pāli Nouns, Pronouns and Adjectives February 22, 2020
  • Conjugation of Pāli Verbs February 22, 2020
  • পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস – ২. গ্রন্থকার পরিচিতি February 2, 2020
  • পালি গ্রন্থাবলীর ইতিহাস – ১. ত্রিপিটক পরিচিতি February 1, 2020
  • বিপুলপর্বত সুত্র January 25, 2020

সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো

  • অর্পন বড়ুয়া on ২. আমগন্ধ সুত্র
  • অর্পন বড়ুয়া on ৭. মঘের কাহিনী
  • ছদক চাকমা on বিপুলপর্বত সুত্র
  • Bodhiratna Bhikkhu on চতুর্থ পারাজিকা
  • Bodhiratna Bhikkhu on কামাবচর কুশল পদগুলোর বিশ্লেষণ

পোস্টের তালিকা

  • ►2020 (8)
    • ►February (4)
    • ►January (4)
  • ►2019 (9)
    • ►December (1)
    • ►November (1)
    • ►October (7)

ট্যাগ

আয়ুকল্প (1) ইন্দ্রকূট (1) কক্করপত্র (1) কোলিয় (1) গৃহীজীবন (1) গড় আয়ু (1) দীর্ঘজাণু (1) বুদ্ধান্তর কল্প (1) ব্যগ্ঘপজ্জ (1) ভ্রুণের ক্রমবিকাশ (1) মাতৃগর্ভ (1) যক্ষ (1) রাজগৃহ (2)
©2021 ত্রিপিটক বাংলা অনুবাদ – জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু | Powered by WordPress and Superb Themes!