= দেবরাজ ইন্দ্র। তাবতিংস স্বর্গের দেবতাদের অধিপতি। পালি নাম: দেৰানমিন্দ। অন্যান্য নাম: দেবরাজ ইন্দ্র, সক্ক, মঘবান, পুরিন্দদ, বাসব, সহস্রাক্ষ, সুজম্পতি।
রেফারেন্স: মঘের কাহিনী
দেবরাজ সক্ক তাবতিংস দেবগণ বা তেত্রিশটি দেবপরিবারের অধিপতি হিসেবে রাজত্ব করেন। তাই তাকে বলা হয় ইন্দ্র বা দেবরাজ ইন্দ্র।
হালি লিচ্ছবির মতে, দেবরাজ ইন্দ্রকে দেখতে পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু বুদ্ধ মহালিকে বলে দিয়েছিলেন, যে তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে খুব ভালো করে চেনেন। এমনকি আগের জন্মে কোন কর্মের কারণে বর্তমানে দেবরাজ ইন্দ্র হয়েছেন সেটাও তিনি ভালোমতো জানেন।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে মঘ নামের এক তরুণ হয়ে ছিল। তাই তাকে বলা হয় মঘবান।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে সবসময় আগে আগে দান দিত। তাই তাকে বলা হয় পুরিন্দদ বা পূর্বদাতা।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে সবসময় সযত্নে (সক্কচ্চং) দান দিত। তাই তাকে বলা হয় সক্ক বা যত্নকারী।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে সবসময় বাসস্থান দান দিত। তাই তাকে বলা হয় বাসব বা আবাসদায়ক।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক মুহর্তের মধ্যে হাজারো অর্থ চিন্তা করতে পারেন। তাই তাকে বলা হয় সহস্রাক্ষ।
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক হচ্ছেন সুজা নামক অসুরকন্যার স্বামী। তাই তাকে বলা হয় সুজম্পতি।
দেবরাজ ইন্দ্রের সাতটি ব্রত
দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে সাতটি ব্রত পালন করেছিলেন, যেগুলো করার কারণে তিনি এখন দেবরাজ হয়েছেন। কোন সাতটি ব্রত? তিনি যাবজ্জীবন পিতামাতাকে ভরণপোষণ করেছেন। যাবজ্জীবন পরিবারের বড়দেরকে সম্মান করেছেন। যাবজ্জীবন কোমল সুরে কথা বলেছেন। যাবজ্জীবন পরচর্চা বা পরনিন্দা থেকে বিরত থেকেছেন। যাবজ্জীবন কৃপণতাহীন নির্মল মন নিয়ে সংসারে বসবাস করেছেন, নির্লোভ মনে, উদার হাতে, উৎসর্গে রত হয়ে, যে যা চায় তাকে তা দিয়ে নিত্য দানে নিরত হয়েছেন। যাবজ্জীবন সত্যবাদী হয়েছেন। যাবজ্জীবন অক্রুদ্ধ হয়ে থেকেছেন এই সংকল্প করে, “রেগে গেলেও যেন তাড়াতাড়ি শান্ত হতে পারি।” দেবরাজ ইন্দ্র সক্ক আগে মনুষ্যকুলে এই সাতটি ব্রত পালন করেছিলেন, যেগুলো করার কারণে তিনি এখন সক্ক বা দেবরাজ ইন্দ্র হিসেবে অবস্থান করছেন।
দেবরাজ ইন্দ্র অসুরদেরকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন
সেই সময়ে তাবতিংস স্বর্গীয় ভবনে অসুরেরা বাস করত। “নতুন নতুন দেবপুত্ররা এসেছেন” এই উপলক্ষে তারা দিব্য মদের আসর বসাল। দেবরাজ সক্ক তার লোকজনকে মদ না খাওয়ার সংকেত দিলেন। অসুরেরা এদিকে দিব্য পানীয় খেয়ে মাতাল হয়ে গেল। তখন সক্ক “এদের দিয়ে সাধারণভাবে রাজত্ব করে কী লাভ?” এই বলে তাদেরকে পায়ে ধরে মহাসাগরে ছুঁড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তারা উল্টে গিয়ে মহাসাগরে পড়ে গেল। অসুরেরা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হলো ঠিকই, কিন্তু তাদের পুণ্যবলে সিনেরু পর্বতের তলদেশে অসুরভবন দেখা দিল। গড়শিঙ্গা বৃক্ষ উৎপন্ন হলো।
দেবরাজ ইন্দ্রের প্রধান স্ত্রী সুজা
দেবরাজ ইন্দ্র মনুষ্যকুলে মঘ হিসেবে জন্মকালে তার প্রধান স্ত্রী ছিল সুজা। কোনো পুণ্য না করে শুধু সাজগোজে ব্যস্ত থেকে জীবন কাটিয়ে দেয়ার কারণে মরণের পরে সে এক পাহাড়ের খাদে একাকী বকী (মেয়ে বক) হয়ে জন্মাল। সক্ক তার স্ত্রীদের কে কোথায় আছে দেখতে গিয়ে দেখলেন, সুধর্মা এখানেই জন্মেছে। নন্দা এবং চিত্রাও এখানে আছে। সুজা কোথায় গেল? চিন্তা করে দেখতে পেলেন বকী হয়ে জন্মেছে। “মুর্খ কোথাকার! কোনো পুণ্য না করে এখন ইতর প্রাণি হয়ে জন্মেছে। তাকে পুণ্য করিয়ে এখানে আনা দরকার।” এই ভেবে তিনি অচেনা বেশে বকীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এখানে কী করে আছ?”
“প্রভু, আপনি কে?”
“আমি তোমার স্বামী মঘ।”
“কোথায় জন্মেছেন স্বামী?”
“আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছি। তোমার বান্ধবীরা কোথায় জন্মেছে জান কি?”
“জানি না, স্বামী।”
“তারাও আমার কাছেই জন্মেছে। তাদেরকে দেখবে?”
“আমি কীভাবে সেখানে যাব?”
“আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাব।”
এই বলে সক্ক বকীকে হাতের উপরে রেখে দেবলোকে নিয়ে গেলেন। সেখানে বকীটাকে নন্দার পুকুরপাড়ে রেখে দিয়ে অন্য তিনজনকে বললেন, “তোমাদের বান্ধবী সুজাকে দেখবে?”
“কোথায় সে, দেব?”
“নন্দার পুকুরপাড়ে।”
তারা তিনজন গিয়ে তাকে দেখে উপহাস করে বলল, “আহা, আর্য্যার এমন সাজগোজের এই ফল! এখন তার ঠোঁট দেখ, পাগুলো দেখ, হাঁটু দেখ। সে তো দেখছি বেশ সুন্দরই হয়েছে!” এভাবে উপহাস করে তারা চলে গেল।
সক্ক আবার বকীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়েছে?”
“দেখা হয়েছে। তারা আমাকে উপহাস করে চলে গেছে। এবার আমাকে আমার জায়গায় নিয়ে চলো।”
সক্ক তাকে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়ে পানিতে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “তাদের ভোগসম্পত্তি দেখেছ তো?”
“দেখেছি, দেব।”
“তোমারও সেখানে জন্মানোর একটা উপায় করা দরকার।”
“আমি কী করব, দেব?”
“আমার উপদেশ রাখবে?”
“রাখব, দেব।”
সুজার পঞ্চশীল পালন
তখন সক্ক তাকে পঞ্চশীল দিয়ে উপদেশ দিলেন, “মনোযোগ দিয়ে এগুলো পালন করবে।” এভাবে উপদেশ দিয়ে তিনি চলে গেলেন। সেই থেকে বকী কেবল মৃত মাছ খুঁজে নিয়ে খেত। সক্ক কয়েকদিন পরে তাকে পরীক্ষা করার জন্য সেখানে গিয়ে বালুচরে মরা মাছের রূপ ধরে চিৎ হয়ে শুয়ে রইলেন। বকী সেটা দেখে মরা মাছ মনে করে তুলে নিল। কিন্তু গিলে ফেলার সময়ে মাছের লেজটুকু নড়ে উঠল। বকী তখন জ্যান্ত মাছ মনে করে তাড়াতাড়ি সেটাকে পানিতে ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে সক্ক আবার মরা মাছের মতো হয়ে বকীর সামনে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলেন। বকী আবার তাকে মরা মাছ মনে করে ধরে গিলতে শুরু করল। কিন্তু লেজ নড়ে উঠতেই জ্যান্ত মাছ বলে আবার ছেড়ে দিল। এভাবে তিনবার পরীক্ষা করার পরে সক্ক বুঝতে পারলেন, বকী সুন্দরভাবে শীল রক্ষা করছে। তখন তিনি নিজের পরিচয় জানিয়ে, “আমি তোমাকে পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম। তুমি সুন্দর করে শীল রক্ষা করেছ। এভাবে শীল রাখলে তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে জন্মাতে পারবে। তাই মনোযোগী হও।” এই বলে চলে গেলেন।
সেই থেকে বকী কখনো মরা মাছ পেত, কখনো পেত না। খেতে না পেয়ে সে কয়েকদিনের মধ্যে শুকিয়ে মারা গেল। তার শীলের ফলে সে বারাণসিতে কুমোরপাড়ায় এক কুমোরের কন্যা হিসেবে জন্মাল। তার পনের ষোল বছরের সময়ে সক্ক চিন্তা করে দেখলেন কোথায় জন্মেছে সে। বারাণসিতে জন্মেছে দেখে তিনি ভাবলেন এবার তার যাওয়া দরকার। তিনি সপ্তরত্নকে শসার মতো করে দেখিয়ে সেগুলো দিয়ে গাড়ি পূর্ণ করে সেই গাড়ি চালিয়ে বারাণসির পথে পথে ঘোষণা করে বেড়াতে লাগলেন, “মা-বাবাগণ, শসা নিন, শসা নিন।” শসার বদলে মুগডাল, মাসকলাই ইত্যাদি বিনিময়ের জন্য আসা লোকজনকে তিনি জানিয়ে দিলেন, “আমি কোনো মূল্যের বিনিময়ে এগুলো দিই না।”
“তাহলে কীভাবে দাও?”
“আমি এগুলো শীল রক্ষাকারী মেয়েদেরকে দিই।”
“শীল জিনিসটা কী, বাপু? সেটা কোন ধরনের? সেটা কি কালো, নাকি নীল ইত্যাদি রঙের?”
“আপনারা শীল কোন ধরনের সেটাও জানেন না। তাহলে কীভাবে সেটা রক্ষা করবেন? আমি এগুলো কেবল শীল রক্ষাকারীকে দিয়ে থাকি।”
“বাপু, এই কুমোরকন্যা তো ‘আমি শীল রক্ষা করি’ বলে বলে বেড়ায়। তাহলে তাকেই দিয়ে দাও শসাগুলো।”
কুমোরকন্যাও বলল, “তাহলে আমাকে দাও, প্রভু।”
“তুমি কী?”
“আমি সর্বদা পঞ্চশীল রক্ষা করি।”
“তোমার জন্যই আমি এগুলো এনেছি।” এই বলে গাড়ি চালিয়ে তার ঘরে গিয়ে সেই শসার মতো করে দেখানো দিব্যধনগুলো তাকে দিয়ে অন্যরা যাতে সেগুলো কোনোভাবে হরণ করে নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “এটা তোমার জীবন যাপনের ধন। পঞ্চশীল অখণ্ডভাবে রক্ষা করো।” এই বলে তিনি চলে গেলেন।
মেয়েটি সেই জন্মে মরণের পরে দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতিপক্ষ অসুরভবনে অসুররাজার পরিবারে বড় কন্যা হিসেবে জন্মাল। পরপর দুই জন্ম ধরে শীল সুন্দরভাবে রক্ষা করার কারণে সে হয়েছিল অত্যন্ত সুন্দরী, যেন সোনার প্রতিমা, অসাধারণ রূপশ্রী তার। অসুররাজ বেপচিত্তি সেখানে আগত অসুরদের কারো কাছে তার কন্যা সমর্পণ করলেন না। তিনি বললেন, “তোমরা আমার কন্যার উপযুক্ত নও।” তিনি চিন্তা করলেন, আমার কন্যা নিজেই নিজের উপযুক্ত স্বামী বেছে নেবে। তাই তিনি অসুরদের দলকে ডেকে কন্যার হাতে ফুলের মালা তুলে দিয়ে বললেন, “তোমার উপযুক্ত স্বামী বেছে নাও।”
সেই সময়ে সক্ক সে কোথায় জন্মেছে দেখতে গিয়ে ব্যাপারটা জেনে ভাবলেন, “এখন তো সেখানে গিয়ে তাকে আমার এখানে আনা দরকার।” এই ভেবে তিনি বুড়ো এক অসুরের রূপ ধারণ করে লোকজনের শেষপ্রান্তে দাঁড়ালেন। অসুরকন্যাও এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বুড়োরূপী সক্ককে দেখামাত্র আগের জন্মে একসাথে বসবাসের কারণে মনে যেন সহসা প্রেমের বান উথলে উঠল। সে “এই হচ্ছে আমার স্বামী” এই বলে তার উপরে ফুলের মালা ছুঁড়ে দিল। অসুরেরা “আমাদের রাজা এতকাল তার কন্যার যোগ্য পাত্র পান নি। এখন যাকে পেলেন সে তো এই কন্যার দাদুর থেকেও বুড়ো মনে হয়।” এই বলে লজ্জা পেয়ে চলে গেল।
সক্ক অসুরকন্যার হাত ধরে “আমি সক্ক” বলে ঘোষণা করে আকাশে উঠে গেলেন। অসুরেরা তা শুনে “বুড়ো সক্ক আমাদেরকে ঠকিয়ে গেল” বলে তার পিছু ধাওয়া করল। এদিকে সারথি মাতলি তখন বৈজয়ন্ত রথ নিয়ে মাঝপথে অপেক্ষা করছিল। সক্ক অসুরকন্যাকে রথে উঠিয়ে দেবনগরীর অভিমুখে রওনা দিলেন। মাঝপথে শিমুলবনে পৌঁছলে রথের শব্দ শুনে গরুঢ় পাখির ছানাগুলো ভয়ে চীৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। তাদের শব্দ শুনে সক্ক মাতলিকে জিজ্ঞেস করলেন, “এরা কারা কাঁদছে?”
“গরুঢ় পাখির ছানাগুলো, দেব।”
“কী কারণে কাঁদছে?”
“রথের শব্দ শুনে মরণভয়ে কাঁদছে।”
“আমার একজনের কারণে এতগুলো পাখি রথের প্রচণ্ড গতির তোড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নষ্ট না হোক। রথ ফেরাও।”
সারথি মাতলি তখন হাজারো সিন্ধব ঘোড়াকে লাঠির মাধ্যমে সংকেত দিয়ে রথ ফেরাল। তা দেখে অসুরেরা ভাবল, বুড়ো সক্ক অসুরপুর থেকে পালাতে পালাতে এখন রথ ঘুরিয়েছেন। নিশ্চয়ই তার সাহায্যকারী সেনারা এসে গেছে। এই ভেবে তারা যে পথে এসেছিল সেই পথেই অসুরপুরে ফিরে গিয়ে আর মাথা তোলার সাহস পেল না।
সক্কও অসুরকন্যা সুজাকে দেবনগরীতে নিয়ে গিয়ে আড়াই কোটি অপ্সরাদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রেখে দিলেন। সুজা বর প্রার্থনা করল, “মহারাজ, আমার এই দেবলোকে মা-বাবা অথবা ভাই বোন কিছুই নেই। আপনি যেখানে যেখানে যাবেন সেখানে আমাকে নিয়ে যাবেন।” সক্কও নিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
তিনি তাবতিংস নগরীতে অসুরদের উপদ্রব নিবারণের জন্য দেবনগরীর গেটগুলোতে বজ্র হাতে নিয়ে থাকা ইন্দ্রের প্রতিমা স্থাপন করে রেখেছেন। অসুরেরা নাগ ইত্যাদিদেরকে জয় করে অগ্রসর হলেও দূর থেকে ইন্দ্রের মূর্তি দেখেই “সক্ক বের হয়েছেন রে!” বলে ভয়ে পালিয়ে যায়।
মাতাল হন নি বলে মঘবান, দেবতাদের মধ্যে সেরা হতে পেরেছেন।
মাতাল না হওয়াটা প্রশংসনীয়, মাতাল হওয়াটা সর্বদা নিন্দনীয়।
এই গাথাটা শাস্তা বৈশালিতে উঁচু চুড়াযুক্ত হলঘরে অবস্থানকালে দেবরাজ সক্ককে উপলক্ষ করে বলেছিলেন।
এছাড়া তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে উপলক্ষ করেও সক্কপ্রশ্ন সুত্র দেশনা করেছিলেন।
এরাবণ হাতির পিঠে দেবরাজ ইন্দ্র
মনুষ্যকুলে মঘ জন্মের সময়ে যে হাতিটা তাদের অতিথিদের সেবা শুশ্রুষায় সাহায্য করত, সে জন্মালো এরাবণ নামের দেবপুত্র হয়ে। দেবলোকে ইতর প্রাণি জন্মায় না। তবে সে উদ্যানে খেলতে নামলে নিজের দেহ বদলে দেড়শ যোজন উঁচু এরাবণ নামের হাতি হয়ে যায়। তেত্রিশজনের জন্য সে তেত্রিশটা হাঁড়ি নির্মাণ করে। সেগুলোর বেড় হয় তিন গাবুত কিংবা আধ যোজন। সবার মাঝখানে সক্কের জন্য নির্মাণ করে ত্রিশ যোজন বেড়বিশিষ্ট বড়সড় হাঁড়ি। তার উপরে থাকে বার যোজন বিস্তৃত রত্নময় মঞ্চ। তার মাঝে মাঝে থাকে সপ্তরত্নময় পতাকা, যেগুলো হয় যোজন পরিমাণ উঁচু। এর শেষ মাথায় ঝুলে থাকে টুংটাং শব্দওয়ালা ঘন্টাগুলো। মৃদু বাতাসে সেগুলো পঞ্চাঙ্গ তূর্যশব্দ মিশ্রিত দিব্যগীতের শব্দের মতো শব্দ করে। মঞ্চের মাঝে সক্কের জন্য যোজন বিস্তৃত মণিপালঙ্ক থাকে। সক্ক সেখানে বসেন। তেত্রিশজন দেবপুত্র নিজ নিজ হাঁড়িতে রত্নময় পালঙ্কে বসেন। তেত্রিশজনের জন্য প্রত্যেকটি হাঁড়িতে সাতটা সাতটা করে দাঁত বানিয়ে দেয়। সেগুলোর একেকটি হয় পঞ্চাশ যোজন বিস্তৃত। একেকটি দাঁতে সাতটি করে পুকুর থাকে। একেকটি পুকুরে থাকে সাতটি করে পদ্মগুচ্ছ। একেকটি পদ্মগুচ্ছে থাকে সাতটি করে পদ্মফুল। একেকটি ফুলে থাকে সাতটি করে পাপড়ি। একেকটি পাপড়িতে সাতজন করে দেবকন্যা নাচতে থাকে। এভাবে পঞ্চাশ যোজন স্থানে হাতির দাঁতগুলোর উপরে নাচগানের উৎসব চলতে থাকে। এমন মহাযশ উপভোগ করতে করতে দেবরাজ সক্ক বিচরণ করে থাকেন।