= গৃহীদের পালনীয় পাঁচটি নিয়ম।
রেফারেন্স ১. মঘের কাহিনী
সুজার পঞ্চশীল পালন
দেবরাজ ইন্দ্রের (সক্ক) আগের জন্মের স্ত্রী সুজা পুণ্যকাজ না করায় মরণের পরে বকী হয়ে জন্মাল। সক্ক তাকে পঞ্চশীল দিয়ে উপদেশ দিলেন, “মনোযোগ দিয়ে এগুলো পালন করবে।” এভাবে উপদেশ দিয়ে তিনি চলে গেলেন। সেই থেকে বকী কেবল মৃত মাছ খুঁজে নিয়ে খেত। সক্ক কয়েকদিন পরে তাকে পরীক্ষা করার জন্য সেখানে গিয়ে বালুচরে মরা মাছের রূপ ধরে চিৎ হয়ে শুয়ে রইলেন। বকী সেটা দেখে মরা মাছ মনে করে তুলে নিল। কিন্তু গিলে ফেলার সময়ে মাছের লেজটুকু নড়ে উঠল। বকী তখন জ্যান্ত মাছ মনে করে তাড়াতাড়ি সেটাকে পানিতে ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে সক্ক আবার মরা মাছের মতো হয়ে বকীর সামনে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলেন। বকী আবার তাকে মরা মাছ মনে করে ধরে গিলতে শুরু করল। কিন্তু লেজ নড়ে উঠতেই জ্যান্ত মাছ বলে আবার ছেড়ে দিল। এভাবে তিনবার পরীক্ষা করার পরে সক্ক বুঝতে পারলেন, বকী সুন্দরভাবে শীল রক্ষা করছে। তখন তিনি নিজের পরিচয় জানিয়ে, “আমি তোমাকে পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম। তুমি সুন্দর করে শীল রক্ষা করেছ। এভাবে শীল রাখলে তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে জন্মাতে পারবে। তাই মনোযোগী হও।” এই বলে চলে গেলেন।
সেই থেকে বকী কখনো মরা মাছ পেত, কখনো পেত না। খেতে না পেয়ে সে কয়েকদিনের মধ্যে শুকিয়ে মারা গেল। তার শীলের ফলে সে বারাণসিতে কুমোরপাড়ায় এক কুমোরের কন্যা হিসেবে জন্মাল। তার পনের ষোল বছরের সময়ে সক্ক চিন্তা করে দেখলেন কোথায় জন্মেছে সে। বারাণসিতে জন্মেছে দেখে তিনি ভাবলেন এবার তার যাওয়া দরকার। তিনি সপ্তরত্নকে শসার মতো করে দেখিয়ে সেগুলো দিয়ে গাড়ি পূর্ণ করে সেই গাড়ি চালিয়ে বারাণসির পথে পথে ঘোষণা করে বেড়াতে লাগলেন, “মা-বাবাগণ, শসা নিন, শসা নিন।” শসার বদলে মুগডাল, মাসকলাই ইত্যাদি বিনিময়ের জন্য আসা লোকজনকে তিনি জানিয়ে দিলেন, “আমি কোনো মূল্যের বিনিময়ে এগুলো দিই না।”
“তাহলে কীভাবে দাও?”
“আমি এগুলো শীল রক্ষাকারী মেয়েদেরকে দিই।”
“শীল জিনিসটা কী, বাপু? সেটা কোন ধরনের? সেটা কি কালো, নাকি নীল ইত্যাদি রঙের?”
“আপনারা শীল কোন ধরনের সেটাও জানেন না। তাহলে কীভাবে সেটা রক্ষা করবেন? আমি এগুলো কেবল শীল রক্ষাকারীকে দিয়ে থাকি।”
“বাপু, এই কুমোরকন্যা তো ‘আমি শীল রক্ষা করি’ বলে বলে বেড়ায়। তাহলে তাকেই দিয়ে দাও শসাগুলো।”
কুমোরকন্যাও বলল, “তাহলে আমাকে দাও, প্রভু।”
“তুমি কী?”
“আমি সর্বদা পঞ্চশীল রক্ষা করি।”
“তোমার জন্যই আমি এগুলো এনেছি।” এই বলে গাড়ি চালিয়ে তার ঘরে গিয়ে সেই শসার মতো করে দেখানো দিব্যধনগুলো তাকে দিয়ে অন্যরা যাতে সেগুলো কোনোভাবে হরণ করে নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “এটা তোমার জীবন যাপনের ধন। পঞ্চশীল অখণ্ডভাবে রক্ষা করো।” এই বলে তিনি চলে গেলেন।
মেয়েটি সেই জন্মে মরণের পরে দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতিপক্ষ অসুরভবনে অসুররাজার পরিবারে বড় কন্যা হিসেবে জন্মাল। পরপর দুই জন্ম ধরে শীল সুন্দরভাবে রক্ষা করার কারণে সে হয়েছিল অত্যন্ত সুন্দরী, যেন সোনার প্রতিমা, অসাধারণ রূপশ্রী তার।
এই হচ্ছে তার পঞ্চশীল পালনের সুফল।
রেফারেন্স ২. মারের কাহিনী
পঞ্চশীল যেকোনো বয়সে শোভা পায়
মণিময় কানের দুল, লাল রঙের পোশাক ইত্যাদি অলঙ্কার কেবল সেই সেই বয়সীদের গায়ে শোভা পায়। ছোটদের অলঙ্কার বুড়ো বয়সে মানায় না। আবার বুড়োদের অলঙ্কারও ছোটকালে শোভা পায় না। বরং ‘এ তো পাগল মনে হয়’ ইত্যাদি নিন্দাসূচক কথার কারণ হয়ে থাকে। পঞ্চশীল, দশশীল ইত্যাদি কিন্তু ছোটকাল বা বুড়োকাল যেকোনো বয়সে শোভা পায়। সেকারণে বলা হয়েছে, বৃদ্ধকাল পর্যন্ত শীল পালন হচ্ছে সুখ।