= দূরত্ব পরিমাপের একক। পালি নাম: যোজন।
রেফারেন্স: মঘের কাহিনী
মঘ ও তার সহায়কেরা সবাই মিলে কোদাল ইত্যাদি নিয়ে (প্রতিদিন) এক যোজন, দুই যোজন পর্যন্ত রাস্তা সমান করত।
দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধের সময়ে অসুরেরা পরাজিত হলে তখন দশহাজার যোজন বিস্তৃত তাবতিংস দেবনগরী উৎপন্ন হলো। সেই নগরীর পূর্ব ও পশ্চিম গেটের মধ্যকার দূরত্ব ছিল দশহাজার যোজন। উত্তর ও দক্ষিণের গেটের মধ্যকার দূরত্বও ছিল দশহাজার যোজন। সেই নগরীতে এরকম হাজারটা গেট ছিল। সেই নগরীতে আরো ছিল উদ্যান ও পুকুর। আগের জন্মে বানিয়ে দেয়া বিশ্রামশালার পুণ্যফলে সেই নগরীর মধ্যভাগে উৎপন্ন হলো বৈজয়ন্ত নামের প্রাসাদ। সেই সপ্তরত্নময় প্রাসাদ ছিল সাতশ যোজন উঁচু। সেটি তিনশ যোজন উঁচু পতাকা দিয়ে অলঙ্কৃত ছিল। সোনার খুঁটিগুলোতে ছিল মণিময় পতাকা। মণিময় খুঁটিগুলোতে ছিল স্বর্ণালী পতাকা। প্রবালের খুঁটিগুলোতে ছিল মুক্তার পতাকা। মুক্তার খুঁটিগুলোতে ছিল প্রবালের পতাকা। সপ্তরত্নময় খুঁটিগুলোতে ছিল সপ্তরত্নের পতাকা। মাঝখানে থাকা পতাকার উচ্চতা ছিল তিনশ যোজন।
এভাবে বিশ্রামশালা নির্মাণজনিত পুণ্যফলে হাজার যোজন উঁচু প্রাসাদ সপ্তরত্ন সহকারে উৎপন্ন হলো। শ্বেতকাঞ্চন গাছ রোপণের ফলে তিনশ যোজন বেড়বিশিষ্ট পারিজাত বৃক্ষ উৎপন্ন হলো। শ্বেতকাঞ্চন গাছের গোড়ায় পাথরের বসার জায়গা বানিয়ে দেয়ার কারণে পারিজাত বৃক্ষের গোড়ায় উৎপন্ন হলো ষাট যোজন লম্বা, পঞ্চাশ যোজন প্রস্থ, পনের যোজন পুরু জবা ফুলের মতো লাল রঙের পাণ্ডুকম্বল শিলাসন উৎপন্ন হলো। সেখানে বসলে অর্ধেক শরীর ডুবে যায়। উঠলে আবার আগের মতো সমান হয়ে যায়।
হাতিটা জন্মালো এরাবণ নামের দেবপুত্র হয়ে। দেবলোকে ইতর প্রাণি জন্মায় না। তবে সে উদ্যানে খেলতে নামলে নিজের দেহ বদলে দেড়শ যোজন উঁচু এরাবণ নামের হাতি হয়ে যায়। তেত্রিশজনের জন্য সে তেত্রিশটা হাঁড়ি নির্মাণ করে। সেগুলোর বেড় হয় তিন গাবুত কিংবা আধ যোজন। সবার মাঝখানে সক্কের জন্য নির্মাণ করে ত্রিশ যোজন বেড়বিশিষ্ট বড়সড় হাঁড়ি। তার উপরে থাকে বার যোজন বিস্তৃত রত্নময় মঞ্চ। তার মাঝে মাঝে থাকে সপ্তরত্নময় পতাকা, যেগুলো হয় যোজন পরিমাণ উঁচু। এর শেষ মাথায় ঝুলে থাকে টুংটাং শব্দওয়ালা ঘন্টাগুলো। মৃদু বাতাসে সেগুলো পঞ্চাঙ্গ তূর্যশব্দ মিশ্রিত দিব্যগীতের শব্দের মতো শব্দ করে। মঞ্চের মাঝে সক্কের জন্য যোজন বিস্তৃত মণিপালঙ্ক থাকে। সক্ক সেখানে বসেন। তেত্রিশজন দেবপুত্র নিজ নিজ হাঁড়িতে রত্নময় পালঙ্কে বসেন। তেত্রিশজনের জন্য প্রত্যেকটি হাঁড়িতে সাতটা সাতটা করে দাঁত বানিয়ে দেয়। সেগুলোর একেকটি হয় পঞ্চাশ যোজন বিস্তৃত। একেকটি দাঁতে সাতটি করে পুকুর থাকে। একেকটি পুকুরে থাকে সাতটি করে পদ্মগুচ্ছ। একেকটি পদ্মগুচ্ছে থাকে সাতটি করে পদ্মফুল। একেকটি ফুলে থাকে সাতটি করে পাপড়ি। একেকটি পাপড়িতে সাতজন করে দেবকন্যা নাচতে থাকে। এভাবে পঞ্চাশ যোজন স্থানে হাতির দাঁতগুলোর উপরে নাচগানের উৎসব চলতে থাকে। এমন মহাযশ উপভোগ করতে করতে দেবরাজ সক্ক বিচরণ করে থাকেন।
সুধর্মাও মরণের পরে সেখানেই জন্মাল। তার সুধর্মা নামে নয়শ যোজন বিস্তৃত দেবসভা উৎপন্ন হলো। এর থেকে সুন্দর জায়গা নাকি অন্যকোথাও নেই। মাসের আটদিন সেখানে ধর্মশ্রবণ অনুষ্ঠান চলে। একারণেই বর্তমানেও কোনো সুন্দর জায়গা দেখলে নাকি “সুধর্মা দেবসভার মতো” বলে লোকজন বলাবলি করে।
নন্দাও মরণের পরে সেখানে জন্মাল। তার পাঁচশ যোজন বিস্তৃত নন্দা নামের সরোবর উৎপন্ন হলো।
চিত্রা মরণের পরে সেখানে জন্মাল। তার জন্য পাঁচশ যোজন বিস্তৃত চিত্রলতাবন উৎপন্ন হলো। দেবপুত্রদের মরণের সময় ঘনিয়ে আসলে কয়েকটা লক্ষণ দেখা দেয়। তখন তাদেরকে এই চিত্রলতাবনে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা সেখানে প্রবেশ করলে মরণের শোক ভুলে গিয়ে বনের শোভায় মোহিত হয়ে উপভোগ করতে থাকে।