= ইনি ছিলেন কশ্যপ বুদ্ধের আমলে কাশী রাজ্যের রাজা। পালি নাম: কিকী।
কিকী রাজা কশ্যপ বুদ্ধকে চতুর্প্রত্যয় দিয়ে সেবা করতেন
কশ্যপ বুদ্ধের আমলে ঋষিপতনে বিশ হাজার প্রব্রজিত তাপস অবস্থান করত। কশ্যপ ভগবান তাদেরকে আহ্বান করে ধর্মচক্র প্রবর্তন করলেন, অর্থাৎ ধর্ম প্রচার শুরু করলেন। সুত্র শেষে সবাই অর্হৎ হয়ে গেল। এরপর ভগবান বিশ হাজার ভিক্ষু সহকারে সেই ঋষিপতনেই অবস্থান করছিলেন। কাশীরাজ কিকী তাদেরকে চারি প্রত্যয় বা চারটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সেবা করতেন। এরপর একদিন বারাণসীতে বসবাসকারী এক লোক পর্বতে চন্দনসার খুঁজতে গিয়ে তিষ্য তাপসের আশ্রমে পৌঁছে তাকে অভিবাদন জানিয়ে একপাশে দাঁড়াল। তাপস তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, “কোত্থেকে আসছ?”
“বারাণসী থেকে, ভান্তে।”
“সেখানকার খবর কী?”
“সেখানে ভান্তে, কশ্যপ নামের সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন।”
তাপস তখন দুর্লভ কথা শুনে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তিনি কি আমগন্ধ খান, নাকি খান না?”
“ভান্তে, এই আমগন্ধ কী?”
“বন্ধু, মাছমাংস হচ্ছে আমগন্ধ।”
“ভান্তে, সেই ভগবান মাছমাংস খান।”
তা শুনে তাপস তখন একটু হতাশ হয়ে আবার ভাবল, “গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করব। যদি বলেন যে আমগন্ধ খান, তাহলে তাকে সেরকম খেতে নিষেধ করব এই বলে, ‘ভান্তে, আপনার জন্ম, বংশ ও গোত্রের সাথে সেটা মানানসই নয়।’ এভাবে তাকে মাংস খেতে নিষেধ করে তার কাছে প্রব্রজ্যা নিয়ে ভবসংসার থেকে মুক্ত হব।” এই বলে হালকা বহনযোগ্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সে বারাণসীর উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কোথাও একরাতের বেশি না থেকে সোজা এসে বিকালে বারাণসীতে পৌঁছে ঋষিপতনে প্রবেশ করল। ভগবান সেই সময়ে ধর্মদেশনার জন্য আসনে বসে ছিলেন। তাপস তখন ভগবানের কাছে গিয়ে অভিবাদন না জানিয়েই নিরবে একপাশে দাঁড়াল। ভগবান তাকে দেখে সৌজন্যমূলক কিছু কথা জিজ্ঞেস করলেন। সেও “ভালো আছি, মাননীয় কশ্যপ” ইত্যাদি জবাব দিয়ে একপাশে বসে ভগবানকে জিজ্ঞেস করল,
“মাননীয় কশ্যপ কি আমগন্ধ খান, নাকি খান না?”
“হে ব্রাহ্মণ, আমি আমগন্ধ খাই না।”
“সাধু সাধু মাননীয় কশ্যপ। মাংস খাওয়া মানে হচ্ছে অন্য প্রাণির মৃতদেহ খাওয়া। সেটা না খেয়ে আপনি উত্তম কাজই করেছেন। সেটা আপনার জন্ম, বংশ ও গোত্রের পক্ষে একদম মানানসই হয়েছে।”
তখন কশ্যপ ভগবান চিন্তা করলেন, “আমি তো ক্লেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেছি যে আমি আমগন্ধ খাই না। অথচ ব্রাহ্মণ মনে করেছে আমি মাছমাংসের কথা বলছি। আমি বরং আগামীকাল গ্রামে পিণ্ডচারণের বের না হয়ে কিকী রাজার বাড়ি থেকে পাঠানো ভিক্ষান্ন খাব। সেখানে আমগন্ধের ব্যাপারে কথা উঠবে। তখন ব্রাহ্মণকে ধর্মদেশনা দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়া যাবে।” এই ভেবে তিনি পরদিন খুব সকালে উঠে শারীরিক প্রয়োজনীয় কাজ সেরে গন্ধকুটিতে প্রবেশ করলেন। ভিক্ষুরা গন্ধকুটির দরজা বন্ধ দেখে বুঝতে পারল আজ ভগবান ভিক্ষুদের সাথে যাবেন না। তাই তারা গন্ধকুটিকে প্রদক্ষিণ করে পিণ্ডচারণে বের হল।
ভগবান গন্ধকুটি থেকে বের হয়ে সাজানো আসনে বসে রইলেন। তাপসও শাকসবজি রান্না করে খেয়েদেয়ে ভগবানের কাছে গিয়ে বসল। এদিকে কাশীরাজ কিকী ভিক্ষুদেরকে পিণ্ডচারণ করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন ভগবান কোথায়। তারা বলে দিল যে ভগবান বিহারেই আছেন। তা শুনে তিনি নানা পদের ও নানা স্বাদের তরকারি এবং বিশেষ বিশেষ মাংস দিয়ে প্রস্তুত খাদ্যদ্রব্য ভগবানকে পাঠালেন। রাজার অমাত্যগণ সেগুলো বিহারে নিয়ে ভগবানকে জানিয়ে হাত ধোয়ার পানি দিল। এরপর পরিবেশন করতে গিয়ে প্রথমে বিশেষ বিশেষ মাংস দিয়ে প্রস্তুত যাগু দিল। তাপস তা দেখে ভাবতে লাগল, ভগবান সেটা “খাবেন নাকি খাবেন না”। ভগবান তাপসের সামনেই যাগু খাওয়ার সময়ে মাংসের টুকরো নিয়ে মুখে দিলেন। তাপস তা দেখে গরম হয়ে গেল। যাগু পান শেষ হলে এরপর মাংস দিয়ে প্রস্তুত নানা স্বাদের তরকারি পরিবেশন করা হলো। ভগবানকে সেটাও খেতে দেখে এবার তাপস খুব রেগে গিয়ে বলল, “মাছমাংস খাচ্ছে অথচ বলে ‘আমি মাছমাংস খাই না।’” ভগবান খাওয়া শেষ করে হাত পা ধুয়ে বসে রইলেন। তখন তাপস তার কাছে গিয়ে বলল, “মাননীয় কশ্যপ, আপনি মিথ্যা বলেছেন। সেটা পণ্ডিতের কাজ নয়। মিথ্যা বলা হচ্ছে বুদ্ধগণের নিন্দনীয়। পর্বতের পাদদেশে যেসব ঋষি বনের ফলমূল খেয়ে জীবনযাপন করেন তারা পর্যন্ত মিথ্যা বলেন না।” এভাবে তাপস ও কশ্যপ বুদ্ধের মধ্যে বিতর্ক হয়। বিস্তারিত দেখুন => আমগন্ধ সুত্র।