= স্রোতাপত্তি ফল প্রাপ্ত ব্যক্তি। পালি নাম: সোতাপন্ন।
১. মহালি লিচ্ছবি ও লোকজনের স্রোতাপন্ন হওয়া
বৈশালিতে মহালি নামের একজন লিচ্ছবি থাকত। সে তথাগতের সক্কপ্রশ্ন সুত্র শুনে ভগবানকে গিয়ে দেবরাজ ইন্দ্র বা সক্কের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। তখন বুদ্ধ মহালিকে দেবরাজ ইন্দ্রের অতীতের মঘ জন্মের সময়কার সাতটি ব্রতের কথা বললেন। পরে মহালি বিস্তারিত শুনতে চাইলে মঘের কাহিনীও বললেন বিস্তারিত করে। কাহিনী শেষে বুদ্ধ তখন এই গাথা বললেন,
৩০. মাতাল হন নি বলে মঘবান, দেবতাদের মধ্যে সেরা হতে পেরেছেন।
মাতাল না হওয়াটা প্রশংসনীয়, মাতাল হওয়াটা সর্বদা নিন্দনীয়।
গাথা শেষে মহালি লিচ্ছবী স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হল। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বহু লোক স্রোতাপন্ন ইত্যাদি হয়ে গেল। (মঘের কাহিনী)
২. হিমালয়ের এক গ্রামের লোকজনের স্রোতাপন্ন হওয়া
ভগবানের উৎপন্ন হওয়ার আগে আমগন্ধ নামের এক ব্রাহ্মণ পাঁচশ যুবককে সাথে করে তাপস হিসেবে প্রব্রজ্যা নিয়ে হিমালয়ে প্রবেশ করেছিল। তারা পর্বতের মাঝে আশ্রম বানিয়ে বনের ফলমূল খেয়ে সেখানে বসবাস করত। কখনো মাছমাংস খেত না। তখন টক লবণ ইত্যাদি না খাওয়ার ফলে তাদের জণ্ডিস রোগ হলো। তারা টক লবণ ইত্যাদি খাওয়ার জন্য লোকালয়ে এক প্রত্যন্ত গ্রামে আসল। সেখানে লোকজন তাদের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত হয়ে তাদেরকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াল। খাওয়া সেরে তাদের জন্য খাট, চেয়ার, পাত্র, পাপোষ ইত্যাদি নিয়ে এসে বাসস্থান দেখিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভান্তে, এখানে থাকুন। কোনো চিন্তা করবেন না।’ দ্বিতীয়দিনও এভাবে দান দিল। এভাবে তারা প্রত্যেক ঘর থেকে একেক দিন করে দান দিল। তাপসেরা চারমাস সেখানে অবস্থান করে লবণ, টক ইত্যাদি খেয়ে শরীর ঠিকঠাক করল। এরপরে তারা লোকজনকে বলল, “বন্ধুগণ, আমরা চলে যাব।”
তখন লোকজন তাদেরকে তেল, চাল ইত্যাদি দিল। তারা সেগুলো নিয়ে নিজেদের আশ্রমে ফিরে গেল। তারা এভাবে প্রত্যেক বছর সেই গ্রামে আসত। লোকজন তাদের আসার সময় হলে দানের জন্য চাল ইত্যাদি তুলে রেখে তাদের জন্য অপেক্ষা করত। তারা আসলে আগের মতো করেই সম্মান করত।
এরপর জগতে ভগবান উৎপন্ন হয়ে শ্রেষ্ঠ ধর্মচক্র প্রবর্তন করে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ ধর্মের প্রচার শুরু করে, ক্রমান্বয়ে শ্রাবস্তীতে গিয়ে অবস্থান করছিলেন। তিনি একসময় সেই তাপসদের মার্গফলের হেতু আছে দেখে শ্রাবস্তী থেকে বেরিয়ে বিচরণ করতে করতে ক্রমান্বয়ে একসময় সেই গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন। লোকজন ভগবানকে দেখে মহাদান দিল। ভগবান তাদেরকে ধর্মদেশনা করলেন। সেই ধর্মদেশনায় কেউ কেউ স্রোতাপন্ন হলো, কেউ কেউ সকৃদাগামী হলো, কেউ কেউ অনাগামী হলো, কেউ কেউ প্রব্রজ্যা নিয়ে অর্হৎ হলো। এরপরে ভগবান শ্রাবস্তীতে ফিরে এলেন। (আমগন্ধ সুত্র)